ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ও শিশু বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। মাত্র ৪৫টি বেডের বিপরীতে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৪ জনে। বেড সংকট, ওষুধের ঘাটতি, নার্সদের ওপর বাড়তি চাপ এবং চিকিৎসকদের অনিয়মিত রাউন্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ডায়রিয়া বিভাগে ২০ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৩৪ জন, আর ছাড়পত্র পেয়েছে ৩৫ জন। তীব্র ভিড়ের কারণে রোগী রাখার মতো কোনো জায়গা নেই। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে নার্সরা চরম চাপের মধ্যে কাজ করছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, শিশু বিভাগে ২৫ বেডের বিপরীতে ভর্তি ছিল ৬৫ জন শিশু রোগী। নতুন ভর্তি হয়েছে ২৪ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছে ২৮ জন। এনআইসিইউ-এর ১১টি বেডের মধ্যে ভর্তি রয়েছে ৬ জন নবজাতক, খালি আছে মাত্র ৫টি সিট।
হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে ইনজেকশন সিপ্রো, মেট্রো, মেরোপেনেম, ফ্লুক্লক্স, কাছিন, আইভি ক্যানুলা, স্যালাইন সেট, উইন্ডেল প্লাস, বডিকোর্ট এবং শিশুদের জিঙ্ক সিরাপ নেই। সীমিতভাবে মিলছে কলেরা স্যালাইন, সেফট্রিয়াক্সোন, ওমিপ্রাজল, ইমিস্ট্যাট, মাইক্রোফোর সেট, নাপা ও ওআরএস।
একই অবস্থা শিশু বিভাগেও। ইনজেকশন মেরোপেনেম, ফ্লুক্লক্স, কাছিন, কটসন, শিশু স্যালাইন, ইলেকট্রোডেক্স, ১০% ডিএ, মাইক্রোফোর সেট, আইভি ক্যানুলা (২৪), উইন্ডেল প্লাস, বডিকোর্ট নেই। হাতে আছে কেবল সেফট্রিয়াক্সোন, ওমিপ্রাজল, ইমিস্ট্যাট, তাজিড ইনজেকশন, নাপা ও ফেক্সু সিরাপ। শীতের সময়ে রোগীর চাপ বাড়ায় অ্যান্টিবায়োটিক ও জিঙ্ক সিরাপের সংকট পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বিজ্ঞাপন
হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু বিভাগের দুইজন কনসালটেন্টসহ মোট ১০ জন চিকিৎসক প্রতিদিন সকালে রাউন্ড দিলেও বিকেলে বা রাতে তাঁরা আর রাউন্ড দেন না। বিশেষ করে শুক্রবার কোনো রাউন্ড না থাকায় রোগীদের চিকিৎসায় ঝুঁকি বাড়ছে। শুধুমাত্র অনকলে মাঝেমধ্যে চিকিৎসকরা রাউন্ড দিতে আসেন।
অন্যদিকে, ডায়রিয়া ও শিশু বিভাগে মাত্র ২২ জন নার্সকে তিনটি রোস্টারে তিন বেলার ইনজেকশন, স্যালাইন ব্যবস্থাপনা এবং জরুরি সেবা সামলাতে হচ্ছে। ১৭৪ জন রোগীর চাপ সামাল দেওয়া তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে।
সরকারি ওষুধের অভাব থাকায় অধিকাংশ রোগীকেই বাইরে থেকে দামি অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যানুলা সেট, স্যালাইন সেট কিনতে হচ্ছে। অনেক পরিবার তা বহন করতে না পেরে চিকিৎসায় অনিশ্চয়তায় পড়ছেন।
সদর উপজেলার রাজঘরের সুফিয়া খাতুন জানান, ‘ছোট মেয়েকে ডায়রিয়ার কারণে ভর্তি করানোর প্রথম দিন একটিও ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাইনি সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এখন কিছু ওষুধ মিলছে, তবে গরিব মানুষ হয়ে এভাবে সবসময় বাইরে থেকে কিনে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর।’
শাহবাজপুরের ওসমান গণি জানান, হাসপাতালে এসে তিনি শুধু ইমিস্ট্যাট, কলেরা স্যালাইন ও খাবার স্যালাইন পেয়েছেন। প্রয়োজনীয় বাকি সব ওষুধই তাকে বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
শিশু রোগী নুসাইভার মা নাজমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালে এসে একটি ওষুধও পাইনি। প্রয়োজনীয় সব ওষুধই বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। গরিব মানুষ হয়ে এই অতিরিক্ত খরচ কীভাবে সামলাই, বুঝে উঠতে পারছি না।’
শিশু বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স মুক্তা খাতুন জানান, হাসপাতালে আপাতত প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধের সরবরাহ থাকলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইটেম বাহির থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, রোগীরা চাইলেই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তবে আইভি ক্যানুলা, মাইক্রোফোর, স্যালাইন সেট এবং কিছু দামি ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। শিশুদের জন্য নাপা ও ফেক্সু সিরাপ ছাড়া আর কোনো সিরাপ মজুদ নেই। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় প্রতিটি রোগীকে সামলানো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন:
অন্যদিকে, ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ জুলেখা বেগম জানান, মাত্র ২০টি বেডে ১০৯ জন রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে নার্সরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে কাজ করছেন। বিশেষ করে শিশু ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। তিনি বলেন, বর্তমানে কিছু ওষুধের সরবরাহ থাকলেও কলেরা স্যালাইন ও খাবার স্যালাইন সীমিত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসকরা রাউন্ড শেষ করে চলে গেলেও নার্সদেরই ২৪ ঘণ্টা রোগীদের পাশে থেকে সেবা দিতে হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে।
শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আকতার হোসাইন বলেন, বর্তমানে রোগীর চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধির কারণে শিশু রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবুও সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থেকে আমরা সাধ্যমতো সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, হাসপাতালে ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই। তবে কয়েকটি সরঞ্জাম মজুদ না থাকায় বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তিনি আরও জানান, চিকিৎসকরা নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন এবং শুক্রবার (আজ) থেকে রাউন্ড কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্ক: ক্ষমা পেয়ে কাজে যোগ দিলেন ডা. ধনদেব চন্দ
প্রতিনিধি/একেবি

