বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। সরকারি চিকিৎসা সেবা স্বল্পমূল্যের হলেও বাস্তবে রোগীদের বাধ্য করা হচ্ছে নানা অনিয়ম, দালালচক্রের প্রতারণা, টয়লেট-গোসলখানার ভয়াবহ নোংরা পরিবেশ এবং অতিরিক্ত বকশিশের বোঝা নিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকের দিকে ঝুঁকতে।
হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি দালালচক্র। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমছে না। রোগীরা বলছেন, দালালদের পেছনে রয়েছে বড় একটি অদৃশ্য শক্তি।
বিজ্ঞাপন
রোগীদের ওয়ার্ডে আনা-নেওয়া কিংবা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় ব্যবহৃত হুইলচেয়ার ও স্ট্রেচার প্রতি ব্যবহারে তাদের গুনতে হচ্ছে কমপক্ষে ১০০ টাকা। অনেক সময় এটি বাধ্যতামূলক বকশিশে পরিণত হয়েছে। দরিদ্র রোগীরা এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে টয়লেটে জমে থাকা বর্জ্য, ড্রেন আটকে থাকা, পানির অভাব, ভেজা পিচ্ছিল মেঝে ও প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। অনেক টয়লেটে আলোর ব্যবস্থা নেই, রোগীরা মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করতে বাধ্য হন। গাইনি ওয়ার্ডে পানির সংকটের কারণে প্রসূতিদের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
নাটাইপাড়ার রোগী আম্বিয়া বলেন, বাথরুমে পানি থাকে না, দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। পরিষ্কার করতে বললে ক্লিনাররা পরে আসবে বলে চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
ময়েজ মিয়া এলাকার বাসিন্দা মুনজু সেখ বলেন, ‘চিকিৎসা ভালো, ডাক্তার ভালো কিন্তু বাথরুমে ঢুকলেই নাকে-মুখে হাত চেপে ধরতে হয়। মনে হয় যেন মৃত্যু কূপে ঢুকেছি।’
হাসপাতালের অনুমোদিত ১২৯ টি ক্লিনার পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ৯০ জন। আউটসোর্সিংয়ে আরও ৫ জন কাজ করলেও বিশাল ভবনের পরিচ্ছন্নতা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। রোগীদের অভিযোগ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বড় অংশই দায়িত্বে উদাসীন এবং তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তাদের মনিটরিং দুর্বল।
১৯৯২ সালে কলেজের কার্যক্রম শুরুর পর ২০০৬ সালে শজিমেক নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়। পরে আইসিইউসহ ১৩টি নতুন বিভাগ চালু হয়। রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় ২০১৮ সালে ভবন সম্প্রসারণ করে সাততলা পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। ২০১৯ সালে ১,২০০ রোগী ভর্তির অনুমোদন দেওয়া হলেও টয়লেট-গোসলখানার মতো মৌলিক সুবিধার কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি।
বগুড়ার এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন হাজারো রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। ভবন বড় হলেও মৌলিক সুবিধার সংকট রোগীদের সেবা নয়, বরং বাড়তি দুর্ভোগে ফেলে দিচ্ছে। অনিয়ম বন্ধ, পরিচ্ছন্নতার উন্নতি ও দালাল সিন্ডিকেট নির্মূল করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি রোগী ও রোগীরস্বজনদের।

শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মঞ্জুর এ মুর্শেদ জানান দালাল চক্রকে ধরতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি, ধরতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবনের বিভিন্ন সমস্যাগুলো জানানো হয়েছে। লোকনির্মাণ বিভাগ কাজ শুরু করেছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/একেবি

