বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বেগম রোকেয়াকে অবমাননার ঘটনায় বেরোবি’র তীব্র নিন্দা

জেলা প্রতিনিধি, রংপুর
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

বেগম রোকেয়াকে অবমাননার ঘটনায় বেরোবি’র তীব্র নিন্দা

নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক ‘কাফির-মুরতাদ’ বলে মন্তব্য করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসন।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ নিন্দা জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. একরামুল হক।


বিজ্ঞাপন


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: সম্প্রতি নারী জাগরণ ও সমাজ সংস্কারের অগ্রদূত মহীয়সী নারী রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ‘কাফির-মুরতাদ’ মন্তব্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

রোকেয়ার মতো আলোকিত মানুষ সম্পর্কে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের এমন মন্তব্যে বেরোবি প্রশাসন গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করছে। বাঙালি নারীজাগরণ, নারীশিক্ষা বিস্তার, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং আধুনিক সমাজে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় রোকেয়া যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তার প্রতি এমন অবমাননাকর মন্তব্য সমগ্র নারীমুক্তি আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে একটি দায়িত্বহীন কাজ।

মহীয়সী রোকেয়া তার সমগ্র জীবন সমাজের পশ্চাৎপদতা, কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পণ প্রথা এবং নারীর অধীনস্থ অবস্থানের বিরুদ্ধে কলম ও সংগ্রামের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছেন। ‘মতিচূর’, ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘অবরোধবাসিনী’ বা ‘পদ্মরাগ’ যেকোনো গ্রন্থেই তিনি মানুষ ও মানবতার পক্ষে যুক্তি, প্রগতি, মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতার শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। রোকেয়ার চিন্তা ও দর্শন কখনোই ইসলাম কিংবা ধর্মীয় মৌলিক নীতিমালার বিপক্ষে ছিল না। তিনি ইসলামী অনুশাসনের মধ্যেই নারীদের অধিকারের কথা বলেছেন। রোকেয়া নিজে একজন “প্র্যাকটিসিং মুসলিম” ছিলেন বলে তার জীবনীকারেরা উল্লেখ করেছেন। এমন একজন আলোকবর্তিকাকে ‘মুরতাদ’ বা ‘কাফির’ আখ্যা দেওয়া কেবল অবমাননাকরই নয়; এটি সমাজে বিদ্বেষ ও নারীর অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি অপচেষ্টা এবং দেশীয় আইনে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও স্মৃতিকে ধারণ করেই উত্তর জনপদে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর নামকরণ করা হয়। শিক্ষা, গবেষণা ও মুক্তজ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে নারীর অগ্রযাত্রা এবং বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর অত্যন্ত মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে ‘রোকেয়া দিবস’ পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যা তার আদর্শকে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে। দেশের নারী উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ এবং প্রগতিশীল সমাজ গঠনের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সমাজে তার বাস্তব প্রতিফলনের লক্ষ্যেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


বেরোবি প্রশাসন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনসহ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যে, ঘটনাটি যথাযথভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মান ও মর্যাদা রক্ষা এবং শিক্ষাঙ্গনে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করছে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের অনভিপ্রেত মন্তব্য করতে উৎসাহিত না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর