লবণাক্ততা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে। বহুদিন ধরেই এই অঞ্চলের মানুষ জ্বালানির সংকটে ভুগছেন। রান্নার নিরাপদ ও সহজলভ্য জ্বালানি না থাকায় এখনো গ্রামীণ নারীরা নির্ভর করছেন খড়–কুটা, শুকনো ডাল, পাতা-লতা, গোবরের ঘুঁটি ও বিভিন্ন জৈব উৎসের ওপর। ফলে প্রাকৃতিক এই সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে।
উপকূলীয় অঞ্চলে জ্বালানির টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবাদ চণ্ডিপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীণ জ্বালানি মেলা ও প্রদর্শনী। পানখালী কৃষক সংগঠন, গ্রিন কোয়ালিশন এবং বারসিকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে দুটি গ্রামের কৃষক–কৃষাণিরা অংশ নেন।
বিজ্ঞাপন
![]()
মেলায় আবাদচণ্ডিপুর ও পানখালী গ্রামের অংশগ্রহণকারীরা প্রায় ১৩৫ ধরনের কৃষিভিত্তিক ও প্রাকৃতিক জ্বালানি প্রদর্শন করেন। এর মধ্যে ছিল, গোবরের চুলি ও ঘুঁটি, মশাল, মাটি–ছাই দিয়ে বানানো গুল, গাছের শুকনো ডাল, ভাসমান ঘাস, পাতা-লতা, খড়–কুটা ও নানা জৈব উপাদান। অংশগ্রহণকারীরা জানান, এসব জ্বালানি একসময় গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল; কিন্তু দ্রুত কমে যাচ্ছে এ উৎসগুলো।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্রিন কোয়ালিশনের কার্যকরী সদস্য আনন্দিনী মুন্ডা। বক্তারা বলেন, লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় নারীরা যেমন বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়ছেন, তেমনি জ্বালানির অভাবে তাদের জীবনযাপনও কঠিন হয়ে উঠছে। বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, যা নারীদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
বিজ্ঞাপন
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মাহতাব উদ্দিন সরদার বলেন, জ্বালানি সংকট দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত কাঠ সংগ্রহ ও বন উজাড়ের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় বিপদে পড়বে।
মেলায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বারসিকের হিসাবরক্ষক বিধান মধু, ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর বরষা গাইন, সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা মনিকা পাইক, ক্যাম্পেইন অ্যান্ড নেটওয়ার্ক ফ্যাসিলিটেটর স. ম. ওসমান গনী প্রমুখ।
![]()
বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ বাড়তে থাকায় উপকূলীয় নারীরা জ্বালানির সংকট মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু সহনশীল কৃষির দিকে ঝুঁকছেন। তবে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, সমর্থন ও সচেতনতার অভাবে তারা এখনও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
মেলায় অংশগ্রহণকারীরা টেকসই জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গ্রামীণ পর্যায়ে আরও বেশি সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানান।
প্রতিনিধি/এসএস

