ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কিশোরগঞ্জ–৪ (ইটনা–মিঠামইন–অষ্টগ্রাম) আসনে জমে উঠেছে নতুন উত্তাপ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের বিপরীতে এবার শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী, সমাজকর্মী, গবেষক ও উদ্যোক্তা কাজী রেহা কবির সিগমা।
তিনি ধাপে ধাপে হাওরের তিন উপজেলায় ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে চালাচ্ছেন গণসংযোগ।
বিজ্ঞাপন
সিগমার ভাষায়— ‘কথা বলে ভাইরাল হওয়া যায়, কিন্তু কাজই প্রমাণ করে কে প্রকৃত হেভিওয়েট। যোগ্যতা দিয়েই নেতৃত্বের মূল্য নির্ধারিত হবে।’
‘এমপি হই বা না হই—হাওরবাসীর পাশে থাকবো’
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) অষ্টগ্রামের সদর ইউনিয়ন ও দেওঘর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ চলাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিগমা বলেন— ‘এমপি হই বা না হই—হাওরবাসীর জন্য কাজ করাই আমার লক্ষ্য।’
তিনি জানান, হাওরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সংকট হলো স্বাস্থ্যসেবা। সেখানে রোগী ও প্রসূতি মায়েদের যথাযথ চিকিৎসা নেই; দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে যেতে হয়, যা তাদের জন্য কষ্টকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন
তার ভাষায়—‘স্বাস্থ্যসেবা কোনো দয়া নয়, এটি নাগরিক অধিকার। এজন্য প্রয়োজন হলে নিজের জমিতেই হাসপাতাল নির্মাণ করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার একটা জমি আছে। যদি প্রয়োজন হয়, জনগণের সহযোগিতা পেলে আমি সেই জমি দিয়ে হাসপাতাল করতে চাই। পূর্বপুরুষেরা যেমন মানুষের জন্য জায়গা দিয়েছেন, আমিও সেই ধারাই ধরে রাখতে চাই।’
ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বহু বছর ধরে স্বাস্থ্যসচেতনতা, নারীর শিক্ষা, দরিদ্র সহায়তা এবং সামাজিক উন্নয়নকেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্যোগে কাজ করায় সিগমা ইতোমধ্যেই এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত মুখ।
তিনি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের অভাব–অভিযোগ শোনেন, সমস্যা নোট করেন এবং সমাধানের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, ‘ভোটের সময় ভোট চাইতে এসে পাঁচ বছর হারিয়ে গেলে চলবে না। মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। হাওরের মানুষ নদী পার হয়ে দূরে গিয়ে চিকিৎসা নেবে—এটা লজ্জার।’
হাওরের দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সিগমা একটি বড় পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘হাওরে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং ৫ সিটের আইসিইউ স্থাপন করাই আমার লক্ষ্য।’

স্থানীয় অনেকেই বলছেন—এমন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে হাওরাঞ্চলের মানুষ রোগী পরিবহনের ক্লান্তিকর যাত্রা থেকে মুক্তি পাবে।
হেভিওয়েট ফজলুর রহমানের বিপরীতে নতুন সমীকরণ
এই আসনে বিএনপি ইতোমধ্যেই প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে দলের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে—যিনি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ‘হেভিওয়েট’ নেতা হিসেবে পরিচিত। তার বিপরীতে সিগমার মাঠে নামা এলাকায় নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি করেছে।
কিশোরগঞ্জ–৪ আসনে এখন মুখোমুখি দুই ভিন্ন ধাঁচের রাজনীতি—একদিকে অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিক ফজলুর রহমান, অন্যদিকে মাঠ–ঘেঁষা কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী সিগমা। তার ‘যোগ্যতার লড়াই’–এর বার্তা এবং ‘নিজের জমিতে হাসপাতাল’ করার ঘোষণা হাওরের ভোট–সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
হাওরের মানুষ এখন অপেক্ষায়—অভিজ্ঞতা জয়ী হবে, নাকি নতুন মুখের উন্নয়ন–অঙ্গীকার?
প্রতিনিধি/জেবি

