বদলির আদেশের ১১ মাস পার হলেও কর্মস্থল ছাড়েননি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন। অফিস আদেশ তোয়াক্কা না করে পূর্বের কর্মস্থলে অবস্থান করছেন তিনি।
চলতি বছরের গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের উপসচিব ড. কে এম মামুন উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রকৌশলীকে পাবনা বিএডিসিতে বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি ২০২৫ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের উপসচিব ড. কে এম মামুন উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে নাটোর (বিএডিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেনকে পাবনা বিএডিসি প্রকৌশলী হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি নানান অজুহাত দেখিয়ে বদলির অফিস আদেশের তোয়াক্কা না করে পূর্বের কর্মস্থলেই অফিস করছেন। এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে সেচ প্রকল্পে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। উৎকোচ ছাড়া মেলে না নতুন বরাদ্দ। আবার বরাদ্দ করা গভীর নলকূপের জন্য দেওয়া পাইপগুলো দেওয়া হয় অতি নিম্নমানের। যা ব্যবহারের শুরুতেই ফেটে নষ্ট হয়ে যায়।
গভীর নলকুপ চালক সোহেল রানা জানান, নাটোরের গুদামরক্ষক আব্দুস সামাদ এতো নিম্নমানের পাইপ দিছে যা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আমার ডিপের ১৭৬টি পাইপই ফেটে গেছে। প্রতিটা পাইপ পরিবর্তনে অন্তত ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। লাভের আশায় ডিপ নিয়ে এখন লোকসানের শেষ নাই।
আরেক চালক শহিদুল ইসলামও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পাইপগুলো নিম্নমানের হওয়ায় প্রায়ই তা ফেটে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫০ এর অধিক পাইপ পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া তার দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অসংখ্য সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তথাপি অজ্ঞাত ক্ষমতা বলে তিনি স্বপদে নাটোরে এখনো বহাল তবিয়তে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর মিডিয়াম্যান হিসেবে গুদামরক্ষক আব্দুস সামাদ দায়িত্ব পালন করেন। তার মাধ্যমেই উৎকোচ লেনদেন হয়। কোনো সংবাদকর্মী তার বিষয়ে ইন্টারভিউ নিতে গেলে ম্যানেজের চেষ্টাও করেন।
বড়াইগ্রাম উপজলার আহম্মাদপুর এলাকার চাষি হুমায়ন কবির রান্টু বলেন, বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনকে চাহিত ঘুষ না দেওয়ায় আমাদের নামে বরাদ্দ করা প্রকল্প আটকে রেখেছিলেন। তাকে ঘুষ দিলে অনিয়মও নিয়ম হয় আর ঘুষ না দিলে নিয়মও অনিয়ম হয়। একই অভিযোগ করেন ওই এলাকার আরও অন্তত ১০ বয়োবৃদ্ধ কৃষক।
সহকারী গুদাম রক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, বদলির বিষয়টি ডিপার্মেন্ট দেখবে। এটা নিয়ে আপনাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ বলতে পারবে না আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেই। আমাদের বিএডিসি অফিসে কোনো অনিয়ম নেই। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি।
বিএডিসি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষের সম্মতি না থাকলে তো এখানে এতোদিন থাকতে পারতাম না। তাদের ইচ্ছাতেই আছি। প্রত্যাহার আদেশ হলেই চলে যাব।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে জানতে ডিএডিসি প্রধান কার্যালয়ের সচিবের টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তার পিএস শামীম রেজা ফোন রিসিভ করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পদটি শূন্য রয়েছে। নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর বদলি বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিষয়টি জানা নাই বলে জানান। বদলি আদেশের পরে আবার প্রত্যাহার আদেশ হয় কি-না জানতে চাইলে বলেন, এমন কোনো বিধান নাই। তাহলে বদলির পরে ১১ মাস কেমন করে তিনি বহাল আছেন এমন প্রশ্নেও তিনি উত্তর দিতে অপারগত প্রকাশ করেন।
প্রতিনিধি/টিবি

