সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যথাযোগ্য মর্যাদায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস পালিত

জেলা প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

যথাযোগ্য মর্যাদায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস পালিত

আজ ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। অগ্নিঝড়া ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে দেশের অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের তীর্থভূমি খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুমুক্ত হয়। ওই দিন মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে বিনা যুদ্ধেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মুক্ত ঘোষণা করে। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। 

ওইদিন সকাল ৯টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী স্থানীয় পুরাতন কাচারী প্রাঙ্গণে তৎকালীন মহকুশা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শত্রুমুক্ত ঘোষনা করেন।


বিজ্ঞাপন


যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা অনুষ্ঠান মালার মধ্যে দিয়ে দিনটিকে পালন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবসে সেই সময়ের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শত্রুমুক্ত করতে ৩০ নভেম্বর থেকে আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় মিত্রবাহিনী পাকবাহিনীর উপর বেপরোয়া আক্রমণ চালাতে থাকে। ১ ডিসেম্বর আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় ২০ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। ৩ ডিসেম্বর আখাউড়ার আজমপুরে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। সেখানে ১১ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। শহীদ হন ৩ মুক্তিযোদ্ধা।

এরই মধ্যে বিজয়নগর উপজেলার মেরাশানী, সিঙ্গারবিল, মুকুন্দপুর, হরষপুর, আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, রাজাপুর এলাকা মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী পিছু হটতে থাকলে আখাউড়া অনেকটাই শত্রুমুক্ত হয়। এখানে রেলওয়ে স্টেশনের যুদ্ধে যুদ্ধে পাক বাহিনীর দুই শতাধিক সেনা হতাহত হয়। ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া সম্পূর্নভাবে মুক্ত হয়।

এরপর চলতে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত করার প্রস্তুতি। মুক্তিবাহিনীর একটি অংশ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে এবং মিত্রবাহিনীর ৫৭তম মাউন্ট ডিভিশন রেজিমেন্টের সদস্যরা আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানিসার সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শহরের চারিদিকে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিতে থাকায় ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানীরা সেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজাকারদের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে.এম লুৎফুর রহমানসহ জেলা কারাগারে আটক অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের করুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।


বিজ্ঞাপন


৭ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পাকিস্তানীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। পরে ৮ ডিসেম্বর কোনও ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুমুক্ত হয়। একইদিন সন্ধ্যায় জেলার সরাইল উপজেলাও শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি স্মরনীয় নাম। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাত্রিতে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংস হামলা শুরুর পর ৮ ডিসেম্বও পর্যন্ত পুরো জেলা ছিল রণাঙ্গন এলাকা। এখানে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যেখানে পরাজিত হয় পাকিস্তানী বাহিনী।

এদিকে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্যে  জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করে।

এর মধ্যে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাউতলীতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় পুষ্পস্তক অর্পন করেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। পরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে  শ্রদ্ধা জানান পুলিশ সুপার শাহ্ মোঃ আব্দুর রউফ। পরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার সাধারন মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বেলা ১১টায় বাংলাদেশ  মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ইউনিট কমান্ডের আয়োজনে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের আহবায়ক সৈয়দ এমরানুর রেজার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার শাহ মোঃ আব্দুর রউফ, সিভিল সার্জন ডা. নোমান মিয়া।

প্রতিনিধি/এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর