রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের তারাপুর কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত স্থানে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) ভোররাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা কবরস্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এই ঘটনাকে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের ভাষায়, “যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মেনে নিতে পারে না, তারাই এমন ন্যক্কারজনক কাজ করেছে। আমরা কি এ ধরনের ঘটনা দেখার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম?” তারা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তারাপুর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও কবরস্থানের কেয়ারটেকার শহিদুল ইসলাম জানান, ফজরের নামাজের আযান দিতে যাওয়ার সময় তিনি কবরস্থানে আগুন দেখতে পান। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে স্থানীয় লোকজন ও হেফজখানার শিক্ষার্থীরা এসে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি বলেন, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। এখানে বিদ্যুতের সংযোগ নেই, রাস্তার পাশেও নয়। এটি স্পষ্টত পরিকল্পিত ও নাশকতামূলক কাজ।
ঈদগা গোরস্থানের সেক্রেটারি ও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল আলম বলেন, ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক। এ বিষয়ে কমিটির পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হবে এবং প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. সমশের আলী বলেন, ১৯৭১ সালে দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এ ধরনের ঘটনা দেখে সত্যিই হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আমার ধারণা, ৭১ সালের পরাজিত শক্তিরাই এমন কাজ করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক বলেন, মানুষের কবরেও আগুন দেওয়া হচ্ছে—এ কোন সমাজে আমরা বসবাস করছি? এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি।
পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সদস্য সচিব, সাবেক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান জাহাঙ্গীর বলেন, ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কবরেও নাশকতা চালাচ্ছে। এর বিচার না হলে ভবিষ্যতে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। বিজয়ের মাসে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ঈদগা কবরস্থানের সভাপতি সজীব হোসেন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দ্রুত প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাতুল হক বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কবরস্থান পরিদর্শন করেছি। দুর্বৃত্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

