জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে নেসকো হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটি। সেই সঙ্গে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বাসা-বাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নির্বাহী আদেশ জারি করা না হলে হরতাল ও অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পলাশ কান্তি নাগ বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) গ্রাহকদের আপত্তি সত্ত্বেও নানা কৌশলে এবং জবরদস্তি করে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছে। অথচ গ্রাহকদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নেসকো কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রিপেইড মিটার স্থাপন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু নেসকো সেই নির্দেশনা অমান্য করে এমন কি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গ্রাহকদের মতামত গ্রহণ কিংবা একটি গণশুনানি না করেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বলেন, যতক্ষণ প্রিপ্রেইড কার্ডে টাকা থাকবে ততক্ষণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে, যা সেবামূলক খাতের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিদ্যুৎ আইন ২০০৩-এর ৫৬ নম্বর ধারা মতে, গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে কোম্পানিকে ১৫ দিন পূর্বে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু এই প্রিপেইড মিটার কার্ডের রিচার্জকৃত টাকা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। যা বিদ্যুৎ আইনের পরিপন্থি।
পলাশ কান্তি নাগ জানান, হাইকোর্ট বিভাগে হয়রানিমূলক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে একটি রিট পিটিশন চলমান রয়েছে। যা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বেই নেসকো কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের কাজ করছে।
তিনি বলেন, বিতর্কিত এই প্রিপেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে গ্রাহকরা মিটার ভাড়া ও সারচার্জ বাবদ ৩০% আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হবেন। প্রিপেইড মিটারে প্রতিবার ১ হাজার টাকা রিচার্জে এজেন্ট কমিশন বাবদ ২০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রতিমাসে গ্রাহকদের মিটার ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কতদিন এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে তা অস্পষ্ট। গ্রাহকরা নিজেদের টাকায় ইতিপূর্বে অ্যানালগ ও ডিজিটাল মিটার ক্রয় করলেও তার জন্য কোনো টাকা বিদ্যুৎ বিভাগ পরিশোধ করেনি।
বিজ্ঞাপন
পলাশ কান্তি নাগ বলেন, প্রতি ১ হাজার টাকা রিচার্জে গ্রাহকরা কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে, বাণিজ্যিক ও আবাসিক রেট কীভাবে নির্ধারিত হবে— এসব নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এ ছাড়া, প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে ২০০ টাকা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য ৫০ টাকা হারে গ্রাহকদের সুদ পরিশোধ করতে হবে। প্রিপেইড মিটার কোনো কারণে লক হয়ে গেলে খোলার জন্য ৬০০ টাকা জমা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধ করতে নেসকোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা নীপেন্দ্রনাথ রায়, এবিএম মসিউর রহমান, আব্দুল হামিদ বাবু, মাহফুজার হোসেন, মেহেদী হাসান তরুণ, রেদোয়ান ফেরদৌস, সুবাস বর্মন প্রমুখ।
প্রতিনিধি/এজে

