শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

একযুগ পর সিরাজগঞ্জ চেম্বারের নির্বাচন শনিবার

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ 
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

একযুগ পর সিরাজগঞ্জ চেম্বারের নির্বাচন শনিবার

একযুগেরও বেশি সময় পর আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আবারও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচন করতে যাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। ১৯৮৪ সালে স্থাপিত এই সংগঠনে দীর্ঘদিন পর নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ আসায় জেলার ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

এদিকে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয়ে নিয়মিতভাবে মতবিনিময় সভার পাশাপাশি প্রীতিভোজের আয়োজন করছেন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত দুই গ্রুপের প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে প্রেসিডেন্ট, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিচালক পদপ্রার্থী হয়ে ছুটছেন দ্বারে দ্বারে। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। গণসংযোগ থেকে শুরু করে পোস্টার-ব্যানার সাঁটানো, এবং ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন তারা। মতবিনিময় সভা-উঠান বৈঠক করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠ সরগরম রেখেছেন তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা।


বিজ্ঞাপন


ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে পাবেন, যারা সংগঠনের রাজনৈতিক বলয় ভেঙে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করবেন।

প্রার্থীর সংখ্যা ও পদ
সিরাজগঞ্জ চেম্বার নির্বাচন বোর্ড সূত্র জানায়, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৬ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নির্বাচনে অর্ডিনারি ও অ্যাসোসিয়েট গ্রুপের ২৪টি পদে মোট ৬৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে একজন প্রেসিডেন্ট, একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, দুজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ২০ জন পরিচালক ৫০৭ জন সদস্যের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।

সংগঠনটির অর্ডিনারি গ্রুপে সভাপতি পদে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু এবং মেসার্স সিদ্দিক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন সিদ্দিক (খসরু) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আনিছুর রহমান, অমর কৃষ্ণ দাস, আলাউদ্দিন আল আজাদ লড়ছেন। আর সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনের সাবেক সহ-সভাপতি ও বিসিক শিল্পপার্ক মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল কাদের শেখ, মোজাহিদুল ইসলাম দুদু ও আল-আমিন খন্দকার। এই গ্রুপ থেকে ১৪টি পদের বিপরীতে পরিচালক পদে লড়ছেন ৪৪ জন ব্যবসায়ী। অপরদিকে অ্যাসোসিয়েট গ্রুপের সহ-সভাপতি পদে একজনের বিপরীতে রয়েছেন জাহিদুল ইসলাম, লিটন সাহা ও এম রেজাউল করিম রঞ্জু। এছাড়া ছয়টি পদের বিপরীতে ৮ জন পরিচালক পদে প্রার্থী হয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ও সর্বশেষ নির্বাচন
জানা যায়, সর্বশেষ সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর গত এক যুগে পাঁচটি পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় বিনা ভোটে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ চেম্বারকে পারিবারিক চেম্বারে পরিণত করেছিল। যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় সিরাজগঞ্জ বাণিজ্যিক এলাকা হলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি এই সংগঠন।


বিজ্ঞাপন


ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক ও পারিবারিক বলয় থেকে বেরিয়ে আগামী দিনে সিরাজগঞ্জ চেম্বারকে ব্যবসায়ীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখতে চান তারা।

মেসার্স প্রত্যয় ব্রিকসের মালিক জুয়েল রানা বলেন, ‘আমি নিজেও অর্ডিনারি গ্রুপ থেকে পরিচালক পদে প্রার্থী হয়েছি। আমরা চাই, চেম্বারে এমন নেতৃত্ব আসুক যারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণ করবেন।’

মেসার্স কাজী বিজনেস মার্টের স্বত্বাধিকারী কাজী সোহেল রানা বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগের আমলে চেম্বারে ভোট ছাড়াই পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরা দলের পছন্দের ব্যক্তিকেই চেম্বারে বারবার বসিয়েছেন। আর এ কারণে তারা কখনও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়নি। আমরা আশাবাদী, আগামীতে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা নিশ্চয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই কাজ করবেন।’

আরেক পরিচালক পদপ্রার্থী মো: ফকরুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আমি নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ আরও উন্নত করার জন্য কাজ করবো। সকল সম্মানিত সদস্যের সেবাকে আধুনিকায়ন এবং সিরাজগঞ্জের বাণিজ্য খাতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে কাজ চালিয়ে যাবো। আমি সবসময় ব্যবসায়ীদের সুখে-দুঃখে পাশে আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ।’

অর্ডিনারি গ্রুপের পরিচালক প্রার্থী মো. ওমর আজম খান বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও কাজের ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব। সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিশ্ববাজার এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত করতে কাজ করছি। পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত পণ্য সরবরাহ করতে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাই, পরিচালক পদে আমাকে নির্বাচিত করতে সম্মানিত সকল সদস্যের কাছে আপনাদের দোয়া, সহযোগিতা, সমর্থন এবং ভোট প্রার্থনা করছি।’

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘বিগত দিনে লড়াইয়ের ময়দানে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় যাদের কোনোদিন দেখা যায়নি তারা আজ সিরাজগঞ্জ চেম্বারের দায়িত্ব পেতে চায়। আর এই জন্য আমার বিরুদ্ধে নানা প্রকার অপ-প্রচার চালানো হচ্ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, শুধু ভোটের জন্য নয়, আমি সবসময় ব্যবসায়ীদের পাশে থেকেছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। আগামীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সবাইকে সাথে নিয়ে সিরাজগঞ্জ চেম্বারকে ব্যবসায়ীদের শ্রেষ্ঠ সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব ইনশাআল্লাহ।’

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইণ্ডাষ্ট্রির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ তানহা বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে ও সিসি ক্যামেরার আওতায় চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি ব্যবসায়ীদের সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারব।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর