জায়গা নির্ধারন জটিলতাসহ নানা বাধা পেরিয়ে অবশেষে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্নের তিন বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে যশোরের মনিরামপুরে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের কাজের সূচনা করেন স্থানীয় সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের আওতায় মনিরামপুর উপজেলায় এ প্রকল্পে প্রাক্কলিত মূল্য ১২ কোটি ৫০ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৯.৭০ টাকা এবং চুক্তিমূল্য ১২ কোটি ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৪.৬৪৮ টাকা।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার ছিল প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় উন্নত মসজিদ নির্মাণের। এরই আলোকে ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি (৫৬০) করে মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
জেলা পর্যায় ৪ তলা ও উপজেলা পর্যায় ৩ তলা এ মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে একযোগে ৯০০ মুসল্লি নামাজ আদায়ের সুবিধা পাবেন। এছাড়া নারী ও পুরুষের আলাদা ওযু ও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা, লাইব্রেরি গবেষণা, ও দীনি দাওয়া, কোরআন হেফজ, শিশু শিক্ষা, অতিথি শালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোছলের ব্যবস্থা, হজ্জ যাত্রীদের নিববন্ধন, প্রশিক্ষণ, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার ব্যবস্থা থাকবে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের জুন মাসে টেন্ডারসহ আনুষাঙ্গিক কাজের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে নূর হোসেন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ১৬ জুন এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে উপজেলার জালঝাড়া ছিদ্দীকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নির্ধারিত হয়। কিন্তু ওই জায়গাটি পৌরশহর থেকে দূরে হওয়ায় পৌরশহরের কাছাকাছি স্থানে নির্মাণের জন্য সর্ব মহল থেকে দাবি ওঠে।
বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে পরবর্তিতে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নির্ধারন করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠান। সে মোতাবেক ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল পরবর্তী নির্মাণস্থলের জমির প্রস্তাব ইসলামী ফাউন্ডেশন-এর মহাপরিচালক বরাবর পাঠান।
প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (উন্নয়ন) মোঃ সাখাওয়াত হোসেন স্বাক্ষরিত একটি পত্রে প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ওই স্থানে সয়েল টেস্ট, ডিজিটাল সার্ভে, মসজিদের স্ট্রাকচার ডিজাইন এবং ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুতপূর্বক জরুরী ভিত্তিতে টেন্ডার আহবানের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেন।
কিন্তু তারপরও কাজ শুরু করতে গড়িমসির অভিযোগ ছিল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ১৪ জুন স্থানীয় প্রশাসন, ইমামসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে টিএসটি (টোটাল স্টেশন থিওডোলাইট), ম্যানুয়াল কম্পাস এবং কিবলা এ্যাপস ব্যবহার করে কিবলা নির্ধারন করা হয়।
বুধবার সকালে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি এ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান, এ্যাসিল্যান্ড আলী হাসান, গণপূর্ত-২,যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ড. এস. এম. হেলাল উদ্দীন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নূর হোসেন প্রমুখ।
ঠিকাদার নূর হোসেন বলেন, জায়গা নির্ধারন জটিলতাসহ করোনার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে।
ইমরান হোসেন পিংকু/এসও

