মা নেই আর বাবা থেকেও নেই। এমন চারজন অসহায় শিশুর ভরণপোষণ আর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে মানবতার এক অনন্য নজির গড়লেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা শিহাব আহমেদ।
দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা-অযত্নে বড় হতে থাকা এই চার এতিম শিশুর খবর তিনি জানতে পারেন স্থানীয়দের মুখে। শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে তিনি তাৎক্ষণিক নগদ অর্থ সহায়তা দেন এবং তাদের ভবিষ্যতের পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। শিশুদের করুণ জীবনের বাস্তবতা দেখে এবং তাদের চোখে-মুখে বহুদিন পর ভরসার আলো দেখে এ সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ার সাফিউল ইসলামের স্ত্রী শাপলা বেগম প্রায় এগারো বছর আগে প্রথমে এক কন্যা সন্তানের মা হন। এর তিন বছর পরে একসঙ্গে তিনটি সন্তান জন্ম দেন দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে। সন্তান জন্মের মাত্র দুই মাস পর শাপলা বেগম মারা যান। এরপর সাফিউল ঢাকায় গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং চার সন্তানের খোঁজ নেওয়া বন্ধ করে দেন।
বর্তমানে চার শিশুকে দেখাশোনা করেন তাদের বৃদ্ধ দাদা-দাদি আবেদ আলী ও সাহিদা বেগম। অভাব-অনটনে জীবন কাটালেও তারা এই শিশুদের হাত ছাড়েননি।
আবেদ আলী বলেন, “ছেলের কোনো খোঁজ নেই। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে কষ্ট করে দিন পার করি। কেউ সাহায্য করে না। আজ শিহাব সব দায়িত্ব নিয়েছে, আল্লাহ তার মঙ্গল করুক।”
সাহিদা বেগম বলেন, “মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে চলি। শিহাব আজ না এলে হয়তো না খেয়েই থাকতে হতো।”
বিজ্ঞাপন
শিশুদের এই কষ্টের কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারেননি শিহাব আহমেদ। আবেগে ভেঙে পড়েন তিনি। চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, “আমি ছোট থাকতে মাকে হারিয়েছি। এতিমের কষ্ট কী, তা আমি খুব ভালো জানি।”
প্রতিবেশীরা জানান, মানবিক এই ঘটনার পর এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন শিহাব। বছরের পর বছর অবহেলিত থাকা এই চার শিশুর জীবনে শিহাব আহমেদ নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছেন।
শিহাব আহমেদ বলেন, “আজ থেকে তাদের সব দায়িত্ব আমি নিলাম। প্রতি মাসে তাদের সব খরচ আমি দেব। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”
প্রতিনিধি/একেবি

