৭ বছর ধরে পানিবন্দি মাদারীপুরের শিবচরের ৫টি গ্রামের এক হাজার বিঘা ফসলি জমি। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতু রেল লাইন সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেই দুর্ভোগ নামে এখানকার দেড় হাজার কৃষকের।
প্রকল্পের আওতায় কালভার্টের মুখ ভরাট করে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে দীর্ঘদিনেও চাষাবাদ করতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এমন পরিস্থিতিতে শিগগিরই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।
বিজ্ঞাপন
পদ্মা নদী বিশিষ্ট মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়ন। এখান বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা চালান। অথচ, কৃষকদের এক হাজার বিঘা ফসলি জমি পানিবন্দি ৭ বছরের বেশি সময় ধরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার হাজী নেদুখান চরকান্দি, পুরান কান্দি, শিকদার কান্দি, বাখরের কান্দি, উত্তর বাখরের কান্দি গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে বছরের তিনটি ফসল চাষাবাদ করতেন। কিন্তু ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতু রেল লাইন সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর কৃষি জমিতে বন্ধ চাষাবাদ। এতে চরম দুর্ভোগে কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, মেগা প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের সময় খাল ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ। এতে একদিকে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে জোয়ারের সময় পদ্মা নদীর পানি লোকালয় ঢুকে পড়লেও বের হতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে রবি মৌসুমে আলু, গম, পেঁয়াজ, রসুন ও সরিষার মতো ফসল চাষ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, বার বার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও অদৃশ্য কারনেই তা বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার দাবি, পানি নিষ্কাশনে নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কেটে যাবে এই সমস্যা।
বাখরেরকান্দি গ্রামের কৃষক রুবেল ঘরামী বলেন, ‘এই ফসলি জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার কোন পথ নাই। আমরা সবাই দুর্ভোগের মধ্যে আছি। চাষাবাদও বন্ধ ৭ বছর ধরে।’
স্থানীয় কৃষক হাকিম খান বলেন, ‘আমরা এই জমিতে বছরে তিনটি ফসল চাষাবাদ করতাম। এখন একটি ফসলও ঘরে তুলতে পারি না। জমি পানিতে বন্দি, সেই সাথে আমরাও পানিতে বন্দি। আমরা এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চাই।’
বিজ্ঞাপন
হানিফ বেপারী নামে এক কৃষক বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম শেষে শীত চলে এসেছে। অথচ, কৃষি জমিতে থৈ থৈ করছে পানি। ৭-৮ বছর ধরে আমাদের ফসলি জমিতে এভাবেই পানি আটকে আছে। কবে চাষাবাদের উপযোগি হবে এই জমি, সেটি আমরা আজও জানতে পারিনি। এখান থেকে পানি নামানোর ব্যবস্থা করা হলে আমরা চাষাবাদ করে জীবনজীবিকা চালাতে পারতাম।’

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কয়েকবার জলাবদ্ধতা দূর করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারনেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ভুক্তভোগী কৃষকরা জলাবদ্ধতা দূর হতে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকশ’ কৃষক। এই জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।’
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম ইবনে মিজান জানান, কৃষকদের কথা চিন্তা করে জমি থেকে পানি সরানোর জন্য ৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তাহলে এই সমস্যা আর থাকবে না।
প্রতিনিধি/একেবি

