শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নতুন চার ছানা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ‘লালটু’

জেলা প্রতিনিধি, পাবনা
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

নতুন চার ছানা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা ‘লালটু’

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দী করে পুকুরে ফেলে হত্যার শিকার হওয়া সেই মা কুকুর 'লালটু' নতুন চারটি ছানা পেয়েছে। নতুন ছানা দত্তক পেয়েই আদর-যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছে সন্তানহারা কুকুরটি, যেন আনন্দে আত্মহারা।

সন্তান হারিয়ে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল লালটু। নির্মম ঘটনায় তার আগের আটটি ছানা বস্তাবন্দী করে পুকুরে ফেলে হত্যা করা হয়। সন্তানহারা লালটুকে তখন দেখা যেত এখানে-ওখানে ছুটে বেড়াতে ডাকতে, ঘ্রাণ নিতে, আবার হতাশ হয়ে ফিরে আসতে। দুধের ভারে তখন তার শরীর ভারী, অথচ বুকে নেই নিজের সন্তানের উষ্ণতা।


বিজ্ঞাপন


একসময় সে চারদিকে ছোটাছুটি করে বেড়াতো ডাকতো, খুঁজতো, আবার ফিরে আসতো শূন্য কোলে। কিন্তু এখন সে শান্ত। কারণ সন্তান হারানো মা কুকুর লালটু আবার পেয়েছে চারটি নতুন সন্তান। গত বুধবার স্বেচ্ছাসেবীরা অন্য জায়গা থেকে দুটি কুকুর ছানা এনে তাকে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে আরও দুটি ছানা তাকে দেওয়া হয়। আর এই নতুন চার ছানাই যেন তার হারানো মমতার ফিরে পাওয়া। ছানাগুলোকে বুকের ভেতর টেনে হারানো সন্তানের উষ্ণতা অনুভব করছে লালটু।

পশুপ্রেমীরা বলছেন, কুকুর ছানাগুলোকে বস্তাবন্দী করে অন্যত্র ফেলে আসা যেত বা কাউকে দিয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু যেভাবে অমানবিকভাবে চারটি নিরীহ কুকুর ছানাকে হত্যা করা হয়েছে তা খুবই জঘন্য। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ দেশে বন্যপ্রাণী হত্যার সংখ্যা বাড়ছে। বন্যপ্রাণী হত্যারও বিচার হয়, সেটাই যেন প্রতিফলিত হোক।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা চত্বরে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দী করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত আসামি নিশি রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, কুকুরটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি রহমান জীবন্ত আটটি কুকুর ছানাকে বস্তার মধ্যে বেঁধে উপজেলা পরিষদের পুকুরে ফেলে দেন। পরিষদের কর্মচারীরা পরের দিন সকালে খোঁজাখুঁজি করেও ছানাগুলোকে পাননি। একপর্যায়ে অভিযুক্ত নিশি রহমানের শিশু সন্তানের কথায় সোমবার সকালে কুকুর ছানাগুলোর মরদেহ পাওয়া যায়।


বিজ্ঞাপন


dog-1

এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তারের নির্দেশনায় মঙ্গলবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই দিন মধ্যরাতে ঈশ্বরদী পৌর সদরের রহিমপুর গার্লস স্কুলের পাশের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর