শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিতে আসিনি, মানুষকে দিতে এসেছি: ব্যারিস্টার ফারজানা

মো. লিটন হোসেন লিমন, নাটোর
প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

আমি নিতে আসিনি, মানুষকে দিতে এসেছি: ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল

বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শ কমিটির বিশেষ সহকারী, মানবাধিকার কমিটি ও মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল সম্প্রতি তার নিজ বাসভবনে ‘ঢাকা মেইল‘কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তার রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ক্ষমতা বা সুবিধা গ্রহণ তার উদ্দেশ্য নয়, বরং জনগণের জন্য কাজ করাই তার লক্ষ্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের নাটোর প্রতিনিধি মো. লিটন হোসেন লিমন

‘আমার নেওয়ার কিছু নেই, দেওয়ার অনেক আছে’
ব্যারিস্টার পুতুল বলেন, ‘আমার পতাকা দেখা হয়েছে, স্যালুট দেখা হয়েছে, প্রটোকলও দেখা হয়েছে। আমার নেওয়ার কিছু নেই, দেওয়ার অনেক আছে। আমি নিতে এখানে আসিনি, আমি মানুষকে দিতে এসেছি। আমার বাবা তিন বার মন্ত্রী ছিলেন। আমি সবকিছু আগেই দেখে এসেছি।’


বিজ্ঞাপন


মরহুম ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল পেশায় একজন আইনজীবী। নাটোর-১ আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তাঁর বাবা ফজলুর রহমান পটলের দখলে ছিল। দীর্ঘ ২৬ বছর পর বাবার স্মৃতি ধারণ করে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।

কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে দলের সমর্থন অর্জন
অল্প সময়ে দল ও জনগণের আস্থা অর্জন করা তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমার পথ কিন্তু এতো সহজ ছিল না, অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাকে ডিবি পুলিশ পেটানোর এক নম্বর আসামি করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আমার স্বামী, ভাই-বোনসহ পরিবারের সকলকে আসামি করা হয়।’

রাজনৈতিক জীবনের ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে সব সময় নজরে রাখা হতো, আমার ফোন ট্যাপ করা হতো। আমি যেহেতু বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য, আমাকে মানবাধিকার নিয়ে অনেক কাজ করতে হতো। ফলে আমার গুম হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আল্লাহপাক অনেক বার আমাকে এ গুম হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। আজ আমার দল আমাকে যে সম্মান দিয়েছে, তার প্রতিদান আমি কখনো দিতে পারবো না।’

বাবার আদর্শকে ‘বাইবেল‘ মনে করেন
বাবার নীতি-আর্দশকে রাজনীতিতে পা রাখার মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার পুতুল বলেন, ‘রাজনীতিতে আমি আমার বাবা ফজলুর রহমান পটলের নামটা মুছে দিতে দেবো না। আমার বাবার নীতি, আদর্শকে বাইবেল মনে করি। বাবার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমার বাবা পুরো উত্তরবঙ্গের আইডল নেতা ছিলেন। বাবার নামটা যেন মুছে না যায়, সেজন্য আমি রাজনীতিতে প্রবেশ করি।’


বিজ্ঞাপন


শুরুর দিনগুলো স্মরণ করে তিনি বলেন, প্রথমে এলাকার মানুষদের নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং সেন্ট্রালেও যোগাযোগ বাড়ান। ‘যখন আমার বাবার পরিচয় দিতাম, দলের সিনিয়র নেতাদের ভালোবাসা, স্নেহ ও আস্থা পেতে থাকলাম। এরপর প্রতিনিয়তই মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ শুরু করলাম।’

নিঃস্বার্থ আইনি সহায়তা ও জন-আস্থা অর্জন
সাধারণ মানুষের আস্থা কিভাবে অর্জন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ তাদের নানা সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসতেন। আমি সবটুকু দিয়ে তাদের কাজটা করে দিতাম। সেখান থেকে মানুষের একটি আস্থার জায়গা তৈরি হলো। তাদের আশা, বিপদের সময় পুতুল তো আছে।’

তিনি জানান, তিনি কখনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো মামলার জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। ‘তবে কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নেইনি। শুধু রাজনৈতিক মামলা নয়, যে কোনো মামলায়। আমার বাবা বলেছেন, যমুনার ওপার থেকে যারা তোমার কাছে আসবে, কারো কাছ থেকে টাকা নেবে না। দরকার হলে আমার কাছ থেকে নিও।’

রাজনৈতিক মামলায় জেলে যাওয়া নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক মামলায় অনেকে নেতাকর্মী জেলে যেতে হয়েছে। তখন তাদের পরিবারের উপার্জন ছিল না, আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। সে সময় আমি তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার জায়গা থেকে পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। এভাবে আমার ওপর মানুষের আস্থাটা তৈরি হয়েছে।’

দলের আস্থার প্রতিদান ধানের শীষের মনোনয়ন
দলের আস্থার জায়গাটি অর্জন করতে পারার ফলেই তিনি বড় দায়িত্ব পেয়েছেন বলে মনে করেন। ২০১৮ সালে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকে মানবাধিকার সদস্য করেন। সে সময়কার ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সেই সময় দেশে গুম, খুন, হত্যা চলছিল। সাদা পোষাকে পুলিশ মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যেতো। এ অবস্থায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে আমাদের এ ছোট টিমকে কাজ করতে হয়েছে...। একটার পর একটা এ কাজগুলো করে যখন দলকে দিলাম, তখন দল আমার উপর আস্থা রাখলো। এরপর মিডিয়া সেলের মতো এত বড় জায়গায় বসালো দল। অনেকে চেয়ে পাই না কিন্তু আমাকে চাইতে হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘দলের সেই আস্থা রয়েছে, আমি পারবো বলেই নাটোর-১ আসনে আমাকে ধানের শীষের প্রার্থী করে এ সম্মান দিয়েছে।’

তারেক রহমানের হাত ধরে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা
নারী নেতৃত্বে সম্পর্কে ব্যারিস্টার পুতুল বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজকে ১০জন নারী নেতৃত্বকে ধানের শীষ নিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। এত বড় চান্স আর কোনো রাজনৈতিক দল নিয়ে আসেনি। নারীদের সম্মান দেওয়া হয়েছে। যেন নারী-পুরুষের ভেদাভেদ না থাকে, তারই দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তারেক রহমান।’ তিনি মনে করেন, নারীর অধিকার ও সম্মান ফিরিয়ে দিতেই তারেক রহমান এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

ss
বিএনপির নীতিনির্ধারক ও মরহুম ফজলুর রহমান পটলের সঙ্গে মেয়ে ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল। 

ভোটারদের প্রতি আহ্বান
ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের কোনো দল নেই, সঠিক ব্যক্তিকে আপনার ভোটটা দিতে পারলে আপনার ঘরটা পরিবর্তন হবে, আপনার সমাজটা পরিবর্তন হবে। আপনার এলাকার সংস্কার হবে। বহু বছর মত প্রকাশ করতে পারেননি, এ সুযোগ এখন আপনাদের।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, মানুষের মত প্রকাশ যেন ‘জীবনের উন্নয়নের পক্ষে হয়, যুব সমাজের কল্যাণে হয়। মানুষ আয় করে ভবিষতে সঞ্চয় রাখতে পারে। নারীরা যেন সমাজের সব ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। তাদের আত্মমর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর