বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

চুইঝাল ছাড়া ঈদ জমে না বাগেরহাটবাসীর

মো. শহিদুল ইসলাম
প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২২, ০৯:০৩ এএম

শেয়ার করুন:

চুইঝাল ছাড়া ঈদ জমে না বাগেরহাটবাসীর
ছবি: ঢাকা মেইল

দক্ষিণাঞ্চলের বিখ্যাত মশলা জাতীয় উদ্ভিদ চুইঝাল। ঈদ বা যেকোনো আচার অনুষ্ঠানে চুইঝাল ছাড়া যেন বাগেরহাটবাসীর জমেই না। সাধারণত মাংসের স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয় মশলাটি। মাংসের সঙ্গে চুইঝাল দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বিখ্যাত খাবার হিসেবে বিবেচিত। যেহেতু কোরবানি ঈদে মাংসের ছড়াছড়ি থাকে, ফলে এসময় চুইঝালের বাজার সবচেয়ে বেশি সরব হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন: চাকরি ছেড়ে চুই-ছোলায় বাজিমাত আশরাফের

অন্যান্যবারের মতো এবারও আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটে বেড়েছে চুইঝালের চাহিদা ও দাম। যদিও এটি বছরের সবসময়ই চাষ হয় এবং বাজারে পাওয়া যায়। তবে কোরবানি ঈদকে চুইঝাল বিক্রির মূল মওসুম বলা যেতে পারে। ঘরে ঘরে মাংস রান্নার হিড়িক পড়ার কারণেই চুইঝালের কেনাবেচা এ সময়ে বেড়ে যায়। সাধারণ সময়ে চুইঝাল কেজিপ্রতি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা করে বিক্রয় হয়। তবে সম্প্রতি বাজার ঘুরে দেখা গেছে— আকার অনুপাতে চুইঝালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা (কেজি)।

আরও পড়ুন: বাগেরহাটের ঐতিহ্য সেমাই পিঠার সঙ্গে হাঁসের মাংস

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে ঈদের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চুইঝাল কিনতে ভিড় করছেন অনেকে। চুইঝাল কিনতে আসা সরদার ফোরকান নামের একজন বলেন, চুইঝাল ছাড়া গরুর মাংসের স্বাদ পুরোপুরি পাই না। ঈদের সময় মেহমানদের পাতে চুইঝাল দেওয়া মাংস দেওয়া আমাদের এই এলাকার সংস্কৃতি। দাম এই সময়ে যদিও একটু বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও কোরবানির সময় মাংস খেতে চুইঝাল লাগবেই।
chui shopশেখ সাদী নামে একজন ঢাকা মেইলকে বলেন, চুইঝালের দাম ঈদের আগে আরও বাড়তে পারে। তাই ভিড় এড়াতে আগেভাগেই চুইঝাল কিনতে এসেছি। আমরা শুধু গরুর মাংস না, সব ধরণের মাংস ও মশাদার খাবারেই চুইঝাল খাই। কোরবানি উপলক্ষে দাম কিছুটা বেড়েছে।

জেলা শহরের বাজারের চুইঝাল বিক্রেতা জনি হাওলাদার বলেন, চুইঝাল সারাবছর মোটামুটি ভালোই বিক্রি হয়। আমাদের বাগেরহাট খুলনাঞ্চলের অন্যতম বিখ্যাত মশলা চুইঝাল। বছরের প্রায় সবসময় আমরা চুইঝাল বিক্রি করে থাকি। কোরবানির উৎসবের সময় মাংস রান্না বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানুষ চুইঝাল বেশি কিনে থাকেন। যার ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চুইঝালের দাম কিছুটা বেড়েছে।

আরও পড়ুন: চুইঝাল উদ্যোক্তা মামুনের মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা

আগে কত টাকা এবং এখন কত টাকায় বিক্রি করছেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, অন্য সময়ে চিকন চুইঝাল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় ও কিছুটা বড় চুইঝাল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। কোরবানি উপলক্ষে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইকারী দরে কিনতেই আমাদের বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই চুইঝালের সাইজ অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করছি।

আরও পড়ুন: চুকনগরে চুই-মাংসের তেলেসমাতি

বাজারের আরেক ব্যবসায়ী তালিম হোসেন জানান, সাধারণত দৈনিক ৫ থেকে ১০ কেজি চুইঝাল বিক্রি হয়। কিন্ত ঈদের সময় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দৈনিক প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি চুইঝাল বিক্রি করি আমরা। চাষি ও গৃহস্থদের কাছ থেকে আমরা চুইঝাল কিনে থাকি। চাহিদা বাড়লে অপরিপক্ক গাছ ও কাটতে হয় বিধায় দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেন পাইকাররা। তার প্রভাবেই ঈদের সময় চুইঝালের দাম সামান্য বৃদ্ধি পায়।
chui shopচুইঝাল চাষি জাহিদ বলেন, এটি মূলত একটি লতাগুল্ম গাছের শিকড় ও কাণ্ড। একটি গাছ থেকে পরিণত চুইঝাল সংগ্রহ করতে হলে গাছটি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। একটি গাছ বড় হতে প্রায় ছয় মাস থেকে বছরখানেক সময় লাগে। সেই জন্য চুইঝালের দাম কিছুটা বেশি। কোরবানি উপলক্ষে চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে, পরিণত গাছের পরিমাণ কম থাকায় দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুন: মেহমান আপ্যায়নে উত্তরবঙ্গের আলু ঘাটি

জেলার ফকিরহাট উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা শেখ মামুন। নিজে চুই চাষ করেন এবং অনলাইন মাধ্যমে চুইঝাল, চুইয়ের আচার, চুইয়ের গুড়া এবং চুইঝালের চারা বিক্রি করেন তিনি। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘প্রায় তিন বছর হলো অনলাইনে চুই বিক্রি করি। অনলাইনে সহজলভ্য হওয়ার কারণে দেশের অন্যন্য অঞ্চলেও এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।’

মামুন আরও বলেন, ‘ঈদ এলে চুইঝালের কদর বাড়ে। তবে গতবারের চেয়ে এবার দ্বিগুন অর্ডার পেয়েছি।’

chui leaf

একই উপজেলার আরেক উদ্যোক্তা লাবীব আহমদ। অনলাইন শপে মধু, নারকেল তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি চুইঝালও বিক্রি করেন। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘চুইঝাল আমাদের দেশি পণ্য। এটি আমাদের দক্ষিণবঙ্গের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে। আস্তে আস্তে আমাদের মতো দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে চুইঝাল সারাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এই ঈদে দেশের সকল প্রান্তের মানুষ আহমদ অনলাইন শপ থেকে চুইঝাল অর্ডার করেছে।

‘আরও প্রচারণা সম্ভব হলে, এটি দ্রুতই সারাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন: চুইঝাল দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল এবং যশোর এলাকায় চুইঝাল মসলা হিসেবে খুব জনপ্রিয়। এটি মূলত দক্ষিণবঙ্গ ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষের কাছে আগে বেশি পরিচিত ছিল না। তবে অনলাইনে সহজলভ্য হওয়ায় ইদানীং এর খ্যাতি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। চুইঝালের কাণ্ড, শিকড় ও শাখা-প্রশাখা প্রায় সবই মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বড় মাছ বা যেকোনো মাংস রান্নায় চুইঝাল ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। রান্নায় এর ঝাঁঝালো স্বাদ এবং ঘ্রাণ খাবারে বাড়ায় আলাদা আকর্ষণ। চুইঝালের বিভিন্ন ঔষধি গুণ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর