শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নেকমরদে বিক্রি হয় লাখ টাকার মাছ ধরার ফাঁদ

মো. জাহিদ হাসান মিলু
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২২, ০২:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

নেকমরদে বিক্রি হয় লাখ টাকার মাছ ধরার ফাঁদ
ছবি: ঢাকা মেইল

বর্ষা এলেই নেকমরদ হাটে ধুম পড়ে বাঁশের তৈরি মাছ ধরার উপকরণ ফাঁদ বা চাঁই ক্রয়-বিক্রয়ে। উত্তরবঙ্গের জেলা ঠাকুরগাঁওর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ হাট এটি। প্রতি হাটবারে এখানে লক্ষাধিক ও মাসে ৪ লাখ টাকার মতো এসব উপকরণ বিক্রি হয় বলে জানা গেছে।

বর্ষাকালে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিচু জায়গা, ফসলি জমি, ও খাল-বিল গুলো পানিতে ভরে ওঠে। বর্ষার নতুন পানিতে এসব জায়গায় পাওয়া যায় দেশী প্রজাতির ছোট ছোট অসংখ্য মাছ।


বিজ্ঞাপন


খাল বিলে ও জমির আইলে মাছ ধরার জন্য গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলো ব্যবহার করেন বাঁশ ও সুতার সমন্বয়ে তৈরি করা ফাঁদ বা চাঁই। তাই বর্ষা এলেই নেকমরদ বাজারে ধুম পড়ে মাছ ধরা উপকরণ বেচাকেনার।

এই চাঁইগুলোতে মাছ ঢোকার রাস্তা থাকে, কিন্তু বের হওয়ার কোনো রাস্তা বা উপায় থাকে না। মাছ এগুলোর ভেতরে ঢোকে, কিন্তু বের হয়ে আসতে পারে না। জমির আইল কেটে চাঁই বসিয়ে দিলেই নতুন পানির সঙ্গে ভেসে আসা মাছ আটকা পড়ে। এছাড়া রাতের অন্ধকারে টর্চ লাইটের আলোয় পোলো দিয়ে মাছকে চাপ দিয়ে ধরা হয়।
NEKMORODগ্রীষ্মের শুরু থেকে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় চাঁই বা ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরা শুরু হয়, যা চলতে থাকে ভাদ্র-আশ্বিন ও কার্তিক মাস পর্যন্ত। বর্ষার নতুন পানিতে মাছ ধরা পড়ে বেশি। তাই পানি বাড়লেই স্থানীয় ও মৎস্য শিকারিদের তৎপরতা বাড়ে মাছ ধরায়। আর চাহিদাও বাড়ে মাছ ধরার উপকরণ ফাঁদ বা বাঁশে তৈরি চাঁইয়ের।

স্থানীয় ভাষায় মাছ ধরার এসব বাঁশের তৈরি উপকরণ ফাঁদ বা চাঁইয়ের নাম হচ্ছে— ডেউহুর, ডেরেই, ভলং ও পোলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ বাজারের কলেজ মোড়ে মাছ ধরার এসব উপকরণ কেনা-বেচা করতে স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন এলাকা ও জেলা থেকে আগত অসংখ্য মানুষের ভীড়।


বিজ্ঞাপন


হাসেম আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসেছেন ডেউহুর কিনতে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘এলাকায় বর্ষার নতুন পানি জমেছে আর এসব পানিতে মাছও পাওয়া যাচ্ছে। তাই এখান থেকে একটি ছোট্ট ডেরেই (দোয়ারি) ২৬০ টাকায় কিনলাম মাছ ধরার জন্য।’

উপজেলার কুমরগঞ্জ করনাইট গ্রাম থেকে আলতাফ আলীও এসেছেন ডেরেই কেনার জন্য। তিনি বলেন, ‘মাঝারি সাইজের একটি ডেরেইর দাম চাচ্ছে ৪০০ টাকা। এখনও কিনিনি, দেখতেছি, তবে আজ মাছ ধরার জন্য ২ টা ডেরেই কিনবো।’
NEKMORODবাদশা আলম নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দিনাজপুর বিরল থানার বাজনাহার থেকে এখানে এসেছেন বাঁশের তৈরি মাছ ধরার উপকরণ কিনতে। এখান থেকে এসব কিনে তিনি আবার দিনাজপুরের বাজনাহার বাজারে বিক্রিয় করবেন। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘যখন যেটার সিজন আসে, তখন সেটার ব্যবসা করি। বর্ষা মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলার লাহিড়ী, নেকমরদসহ বিভিন্ন বাজার থেকে মাছ ধরার এসব উপকরণ কিনে বিক্রয় করি আমাদের এলাকার বাজারগুলোতে। এতে মোটামুটি ভালো লাভ হয়।’

মোহাম্মদ আলী নামে এক মাছ ধরার ফাঁদ বা চাঁই বিক্রেতা বলেন, ১০-১২ বছর ধরে বর্ষাকাল এলেই এই ব্যবসা করি। কোরবানি ঈদে গরুর বাজারের জন্য আজকে বেচাবিক্রি কম হয়েছে। তাও ১২ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে আজ। সামনে ঈদ না হলে হয়তো ২০-২৫ হাজার টাকা বিক্রয় হতো।

পয়গাম আলী নামের এক চাঁই বিক্রেতা বলেন, ‘নেকমরদে প্রতি রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি হয়।’
NEKMORODবালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইরফান আলী ২৫ বছর ধরে করছেন এই ব্যবসা। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, শুধু তো এই ব্যবসা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব না। খালি বর্ষা মৌসুমে এই ব্যবসা করি। এমনি আমাদের এদিকে উঁচু জায়গা। পানি বেশি দিন থাকে না। যে বছর একটু পানি বেশি হয় সে বছর আমাদের এ ব্যবসাও ভালো হয়। বর্তমান বাজারে একটি পোলো ৩০০ টাকা, ডেরেই ও ডেউহুর ৩০০-৬০০ এবং ভলং (দোয়ারি) ২৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নেকমরদ চাঁই বাজারের ইজারাদার বাবর আলী ও খলিফদ্দীন ঢাকা মেইলকে জানান, বাঁশের তৈরি মাছ ধরার উপকরণগুলো বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক পর্যন্ত এসব কেনাবেচা হয়। প্রতি হাটে এখানে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ও পুরো মৌসুমে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মতো এসব জিনিসপত্র বিক্রয় হয়।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর