রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পরকীয়ার জেরে বগুড়ায় স্বামী খুন: স্ত্রী ও প্রেমিক গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি, বগুড়া
প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

পরকীয়ার জেরে বগুড়ায় স্বামী খুন: স্ত্রী ও প্রেমিক গ্রেফতার

বগুড়ায় স্বামীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বগুড়া সদরের হাজরাদীঘি গ্রামের জহুরুল ইসলাম (৩৮) নামের এক ব্যক্তির রক্তাক্ত লাশ মঙ্গলবার সকালে গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত চালিয়ে বুধবার ভোরে নিহতের স্ত্রী শামিমা বেগম (২৮) ও তার প্রেমিক বিপুল হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়।


বিজ্ঞাপন


বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে হাজরাদীঘি গ্রামের একটি ধানক্ষেতে জহুরুল ইসলামের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। নিহতের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল।

লাশ উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী পুলিশকে জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কে বা কারা জহুরুলকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাতে জহুরুল আর ফিরে আসেনি। কিন্তু পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্ত করে নিহতের স্ত্রী শামিমা ও তার মামাতো ভাই পার্শ্ববর্তী অন্তাহার গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে বিপুল হোসেনকে সন্দেহ করে। পরে বুধবার ভোরে নিহত জহুরুলের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী শামিমা ও বিপুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। খালাতো ভাই জহুরুল খুন হওয়ায় পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বিপুল মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়িতে এসেছিলেন।

থানায় দুইজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। নিহতের স্ত্রী শামিমা পুলিশকে জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন। আর জহুরুল ও বিপুল একে অপরের খালাতো ভাই। জহুরুল ইসলামের বাড়ি কাহালু উপজেলায় হলেও বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর ছোটবেলা থেকেই জহুরুল মামার বাড়ি হাজরাদীঘি গ্রামে বসবাস করতেন। তিনি পেশায় বেকারি পণ্য পরিবহনের ভ্যানচালক। আর বিপুল পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। জহুরুলের সঙ্গে শামিমার বিয়ে হয় ১৫ বছর আগে। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জহুরুলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে থেকেই বিপুলের সঙ্গে শামিমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও তারা সেই সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিপুল মাঝেমধ্যে শামিমার বাড়িতে আসতেন। শামিমার বাবা বিপুল এবং জহুরুলের মামা হওয়ায় গ্রামের লোকজন বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখতেন না। তবে কারণে-অকারণে বিপুলের এই যাতায়াত পছন্দ করতেন না জহুরুল। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে জহুরুলের দাম্পত্যকলহ লেগেই থাকত। শামিমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিপুল তাকে একটি ছোট মোবাইল ফোন কিনে দেন। সেই ফোনটি শামিমা লুকিয়ে রাখতেন।


বিজ্ঞাপন


দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক চলার একপর্যায়ে স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিপুলের সঙ্গে পরামর্শ করেন শামিমা। দুইজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোমবার রাতে শামিমা দুধের সঙ্গে কৌশলে তার স্বামীকে ১৫টি ঘুমের বড়ি সেবন করান। কিছুক্ষণ পর জহুরুল অচেতন হয়ে পড়লে রাত ১১টার দিকে বিপুল শামিমার বাড়িতে আসেন। এরপর বিপুল কাঁধে করে জহুরুলকে বাড়ি থেকে বের করে গ্রামের একটি মাঠে পরিত্যক্ত বাড়ির কাছে নিয়ে যান। এ সময় শামিমাও সেখানে যান। এরপর বিপুল জহুরুলের মাথা পরিত্যক্ত বাড়ির দেয়ালের সঙ্গে কয়েকবার আঘাত করেন। একপর্যায়ে একটি পুরোনো স্যানিটারি প্যানের ভাঙা অংশ দিয়ে জহুরুলের মাথায় একাধিক আঘাত করে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে রেখে দুজনই চলে যান।

পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজার রহমান জানান, নিহত জহুরুলের মা-বাবার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ না থাকায় এই ঘটনায় গ্রেফতার শামিমার বাবা শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় দুইজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর