ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ঘোষণায় চমক এসেছে নারায়ণগঞ্জে। পাঁচটি আসনের চারটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও একটিতে এখনো ফাঁকা—আর ঘোষিত তালিকায় নেই কোনো সাবেক এমপি। এক সময়ের জনপ্রিয়, মাঠে সক্রিয় নেতারা এবার প্রাথমিক মনোনয়নেও স্থান পাননি। এমনকি যে কোনো দল থেকেই সাবেক কোনো সাংসদ এইবার নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে (আড়াইহাজার) নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আজহারুল ইসলাম মান্নান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে মাসদুজ্জামান মাসুদ।
বিজ্ঞাপন
এই চারটি আসনের বাইরে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়নি। যেটি একসময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত—সেটি আপাতত শূন্য রাখা হয়েছে।
দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বাদ পড়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন, আতাউর রহমান আঙ্গুর, অধ্যাপক রেজাউল করিম এবং অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। প্রত্যেকে ছিলেন মাঠে সক্রিয়, রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, কিন্তু প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় তাদের নাম নেই।
গিয়াস উদ্দিন ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন, দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সভাপতিও। বয়সের ভার পেরিয়েও তিনি নিজের এলাকায় সভা-সমাবেশ করে মাঠ গুছিয়েছিলেন।
একইভাবে, আড়াইহাজারের তিনবারের সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর দলীয় কর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় ছিলেন। সোনারগাঁয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনিও সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন। আর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের তিনবারের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, যিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই জনপ্রতিনিধি, তাকেও এবার দেখা যায়নি তালিকায়।
বিজ্ঞাপন
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি এবার স্পষ্টভাবে একটি সীমারেখা টানতে চাইছে—দলীয় নেতৃত্ব আর সংসদীয় দায়িত্ব একসঙ্গে নয়। এটি আসলে জিয়াউর রহমানের আমলের নীতি, যেটি ফিরিয়ে আনতে চাইছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলের লক্ষ্য, নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা এবং দলের অভ্যন্তর থেকে যোগ্যদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে বলছেন, যেসব সিনিয়র নেতা অতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বয়স এখন সত্তরের কাছাকাছি। তাই এবার প্রার্থী তালিকায় অগ্রাধিকার পেয়েছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ, মাঠে সক্রিয় নেতারা।
বিএনপির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক এমপিদের বাদ দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপি অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। নতুন নেতৃত্বে ভোটে সম্ভাবনা খুঁজছে দল। তবে মাঠে বাস্তবতা হলো—যারা একসময় ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব রাখতেন, তাদের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া নতুনদের টিকে থাকা কঠিন।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তাই এখন প্রশ্ন একটাই, দল যাদের মনোনয়ন দিল, তারা কি সাবেকদের অভিজ্ঞতা পাশে রেখে মাঠে সমন্বিতভাবে লড়তে পারবেন? নির্বাচনের ঘণ্টা বাজতেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে স্থানীয় রাজনীতি।
প্রতিনিধি/টিবি

