কয়েকদিনের বিরতির পর দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আবারও খালি চোখে দেখা মিলেছে হিমালয়ের বিখ্যাত পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য।
বিশেষ করে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই দেশের গণ্ডি থেকে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম এই পর্বতচূড়া। শীত ও হেমন্তের সময়টিতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বরফে মোড়া সাদা শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। এসময় আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় ভোরের আলোয় কখনও রূপ নেয় গোলাপি, কখনও লাল, আবার কখনও সাদা রঙে। সূর্যের আলোয় রং বদলে নেওয়া এই দৃশ্য যেন এক টুকরো কবিতা।
বিজ্ঞাপন
![]()
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীর তীর, ঐতিহাসিক ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার এবং আশপাশের এলাকা থেকেই সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সকাল ও বিকেল সময়টিই এর সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এ বছর নভেম্বরের শুরুতেই আকাশ পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত থাকায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হিমালয়ের এই পর্বতশ্রেণি। প্রকৃতি ও মানুষ - একই সৌন্দর্যের সুর।
![]()
তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও নজর কাড়ে পর্যটকদের। পিকনিক কর্নারের নানা স্থাপনা, খোলা প্রান্তর ও নির্মল বাতাসে এই এলাকা এখন দেশের শীতকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরুতেই দেখা মিললেও এবারের দৃশ্য অন্যবারের চেয়ে আরও স্পষ্ট ও মনোমুগ্ধকর।
দেশজুড়ে ছুটে আসছেন পর্যটকরা
কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই ভিড় করছেন পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা। অনেকেই রাতভর অপেক্ষা করেন ভোরের প্রথম আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার রঙ পরিবর্তনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে।
পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, উপজেলা পরিষদের বেরং কমপ্লেক্স এবং বিভিন্ন বেসরকারি হোটেল ও রিসোর্ট। বিশেষত্ব হলো - এখানে প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে কোনো টিকিট বা প্রবেশমূল্য লাগে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা দার্জিলিংয়ের টাইগার হিল হলেও, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর দেখা যায় তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর তীর থেকে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়টিই সবচেয়ে উপযুক্ত।
![]()
ঢাকা থেকে আগত দর্শনার্থী মোহাইমিন জানান, গত বছর কয়েকদিন অপেক্ষা করেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা মেলেনি, কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ভোরে সূর্যের আলো পড়লে দৃশ্যটা একেবারে জাদুকরী মনে হয়।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, কয়েকদিনের বিরতির পর আবারও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকদের আবাসন ও সুবিধা বৃদ্ধিতে কাজ করছে প্রশাসন। তিনি আরও বলেন, তেঁতুলিয়ার পর্যটন উন্নয়ন ও নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস

