শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মরুভূমির সাম্মাম চাষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকদের বাজিমাত

মো. ফারুক হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

মরুভূমির সাম্মাম চাষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকদের বাজিমাত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা জমিতে মাচার নিচে ঝুলছে গোলাকার সুস্বাদু ফল সাম্মাম। দেখতে অনেকটা বেল কিংবা বাতাবি লেবুর মতো হলেও ভেতর রসালো তরমুজের মতো। উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিকর মরুভূমির ফল সাম্মামের চাষাবাদ হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। প্রথমবারের মতো নতুন জাতের এই ফল চাষে সাড়া ফেলেছেন পাঁচজন কৃষি উদ্যোক্তা।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র অঞ্চলের রুক্ষ মাটিতে মরুভূমির উচ্চমূল্যের ফল সাম্মাম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তারা। জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায়,  এসএসিপি-রেইনস প্রকল্প ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে চলতি বছরে।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1000258093

সাম্মাম চাষিরা জানান, এই ফল চাষে এক বিঘা জমিতে খরচ হয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রথম বছরে বিঘাপ্রতি লাভ হয়েছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। সাম্মাম চাষাবাদে সেচের পরিমাণ কম লাগায় আগামীতে আরও চাষাবাদ বাড়ানোর আশা কৃষকদের। বরেন্দ্র অঞ্চলের জমি ও আবহাওয়ায় মরুর ফল চাষের উপযোগী বলে দাবি চাষিদের।

thumbnail_1000258091

ভোলাহাট উপজেলার দক্ষিণ নামোটোলা পোলাডাঙ্গা গ্রামের আমিরুল ইসলাম, ময়ামারি গ্রামের মনিরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, শামীম জাহাঙ্গীর ও লম্বাটোলা পোলাডাঙ্গার আব্দুল হামিদ নিজ নিজ জমিতে সাম্মাম চাষ করছেন। তাদের সাম্মাম চাষ করে সফলতা এলাকাজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1000258089

কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, মূলত ইউটিউব দেখে চাষের আগ্রহ পায়। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে তাদের উৎসাহে গত বছর ফলন ভালো পায়। তাই এ বছর পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করি। প্রত্যেক বিঘায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা খরচ করে দুই-আড়াই লাখ টাকা আয় করেছি। বাজারে এর চাহিদা থাকায় প্রতিদিন এসব ফল ঢাকা চট্রগ্রামে পাঠানো হয়েছিল।

thumbnail_1000258084

আরও পড়ুন

চরাঞ্চলে রঙিন গাজর চাষে কৃষকদের ভাগ্যবদলের স্বপ্ন 

thumbnail_1000258082

আরেক কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, আমরা ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি। কিন্তু এসব ফল কোনোদিন চাষ করিনি। কিন্তু কৃষি বিভাগের লোকজনের দেওয়া পরামর্শে চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছি। আগামীতে চাষাবাদের পরিমাণ বাড়াব। কারণ অন্যান্য ফসল করে যেখানে উৎপাদন খরচ উঠাতেই হিমশিম খেতে হয়, সেখানে সাম্মাম চাষে এই ঝুঁকি নেই। কারণ এর চাহিদা ও দাম ভালো বাজারে।

thumbnail_1000258081

কৃষক কাসেম আলী বলেন, আমাদের এলাকায় গত বছর থেকেই কয়েকজন কৃষক এই ফলটি চাষ করছে। প্রথমদিকে আমরা এর চাষাবাদ নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। পরবর্তীতে ফলন ও বাজার দেখে আশাবাদী হয়েছি। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতেও মরুর এই ফল চাষে ভালো করা যাবে, এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। আগামী বছর এর ব্যাপক চাষাবাদ হবে। তবে এর বীজ খুবই দুষ্প্রাপ্য ও দামি হওয়ায় তা সহজে কৃষকদের কাছে বিতরণের দাবি জানায়।

thumbnail_1000258094

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওদুদ বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে এই চাষে প্রাথমিকভাবে সাফল্য অনুপ্রেরণা দিচ্ছে অন্যান্য কৃষকদের। পাঁচজন কৃষকের সাম্মাম চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও। অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন নতুন এই ফল চাষে। বরেন্দ্র অঞ্চলে যেহেতু পানির স্বল্পতা রয়েছে, তাই এই ফল চাষের পরিধি বৃদ্ধির দাবি জানায়। কারণ সাম্মাম চাষে পানির পরিমাণ কম লাগে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে চলমান পানি সংকট সমাধানে অন্যান্য ফল-ফসলের বিকল্প হিসেবে অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সাম্মাম চাষে কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নতুন জাতের এই ফল চাষাবাদে মাঠ দিবস আয়োজন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এটি সম্ভাবনাময় একটি ফল চাষ হতে যাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য। বাজারে চাহিদা ও দাম থাকায় কৃষকরাও আগ্রহী সাম্মাম চাষে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রথমবারের মতো ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষাবাদ হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর