রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নওগাঁ-৩

বিএনপির দুর্গে বিভাজন, জামায়াত একক প্রার্থী নিয়ে প্রস্তুত

সুমন আলী, নওগাঁ
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

বিএনপির দুর্গে বিভাজন, জামায়াত একক প্রার্থী নিয়ে প্রস্তুত
ফজলে হুদা বাবুল (বাঁদিকে ওপরে), রবিউল আলম বুলেট। ডান দিকে ওপরে জামায়াতের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান, নিচে বিএনপির আরেফিন সিদ্দিকী জনি।

জেলার মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৩ আসন গঠিত। পরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক ডেপুটি স্পিকার মরহুম আখতার হামিদ সিদ্দিকী। 

এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে আবারও আশায় বুক বেঁধেছে বিএনপি। তবে এই আসনে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এরই মধ্যে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নেতাকর্মীদের সাথে বিভিন্ন মিছিল, মিটিং, কুশলবিনিময় ও রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে তাঁরা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে, একক প্রার্থী নিয়ে প্রচারণায় অপেক্ষাকৃত নির্ভার জামায়াতে ইসলামী।

নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা এই আসনে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। কেউ কাজ করছেন ফজলে হুদা বাবুলের হয়ে, কেউ রবিউল আলম বুলেটের পক্ষে আবার কেউ পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির হয়ে। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে কৌশলে লবিং এবং মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন—


বিজ্ঞাপন


এদিকে, এ আসনে জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত একক প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মাহফুজুর রহমান। ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি সহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের বিশেষ আনাগোনা নেই এই আসনে।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ফজলে হুদা বাবুল বলেন ‘দলের আদর্শ ধারণ করে দলের যেকোনো কর্মসূচিতে ঢাকা এবং নওগাঁতে সমানতালে অংশগ্রহণ করেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের 'রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা' নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করেছি। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে কাজ করেছি। আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের অন্যায়-অত্যাচারে নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছেন। আমি সব সময় তাদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি, সব সময় থাকব। এলাকার মানুষ আমাকে পছন্দ করে। যোগ্যতার মাপকাঠিতে আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। আমি মনোনয়ন পেলে দল-মত নির্বিশেষে মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। বিএনপি একটি বড় দল, একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকতেই পারে। তাই বলে বিএনপি বিভক্ত নয়। দলে প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সাথেই আমরা থাকব।’

মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট বলেন ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন, দলের দুঃসময়ে যারা মাঠে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, তাদেরকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছি। দলের যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি, কারাবরণ করেছি। তারপরও সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের পাশে আছি। আমি বিশ্বাস করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। জনগণের সর্বোচ্চ সমর্থন আমার সাথে আছে। দল মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ী হব।’

সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি বলেন ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলের নির্দেশনা মেনে যতটুকু সম্ভব দলকে সংগঠিত করতে কাজ করেছি। আমার বাবা মরহুম সাবেক ডেপুটি স্পিকার এই আসন থেকে কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সুবাদে বাবার সঙ্গে থেকে এলাকার যত উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে সেগুলোতে সম্পৃক্ত ছিলাম। সেই কারণে আমার অভিজ্ঞতা আছে। আমার বাবা যতগুলো নির্বাচন করেছেন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি নিজেই প্রার্থী ছিলাম। সেই তুলনায় এবার দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে তৃণমূলের মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি দলের মনোনয়ন পাব।’

আরও পড়ুন—

জামায়াতের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন ‘সংগঠন আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ লক্ষ্যে প্রতিদিনই এলাকার মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ করে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে বিজয়ের বিষয়ে ইনশাআল্লাহ শতভাগ আশাবাদী।’

বিগত সালের নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাবেক ডেপুটি স্পিকার মরহুম আখতার হামিদ সিদ্দিকী ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ধানের শীষ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আখতার হামিদ সিদ্দিকীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকরাম হোসেন চৌধুরী। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন ছলিম উদ্দিন তরফদার, পরে দলে ফিরে এসে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক সিনিয়র সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী সংসদ সদস্য হন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৭৬ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৫৬৭ জন।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর