ঝালকাঠি শহরের মধ্য চাঁদকাঠি এলাকায় চার বছরের শিশু রাইসাকে মানসিকভাবে মারধরের অভিযোগে ঝালকাঠির আদালতে নালিশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শিশুটির নানা আব্দুস সাত্তার হাওলাদার বাদী হয়ে তার বাবা রাকিব হোসেন ও সৎ মা কলি আক্তারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ অভিযোগ দেন।
বিজ্ঞাপন
শিশুটিতে আইনি সহায়তা দেন রেসকিউ ল’ চেম্বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল খান। বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করে জানান, শিশুটি নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। থানায় মামলা না নেয়ায় আমরা আদালতে তাকে আইনি সহায়তা দিয়েছি। আদালতের বিচারক সদর থানার ওসিকে মামলা রেকর্ডের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১ অক্টোবর বাবা রাকিব হোসেনের বাসায় শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ৪ আগস্ট শনিবার সাংবাদিকদের ও থানায় অভিযোগ দেন নানা আব্দুস সাত্তার হাওলাদার।
রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত থানায় বসে আলোটনা করে মীমাংসা পরামর্শ দেয় থানার কর্মকর্তারা।
শিশুটির নানার অভিযোগ, রাইসাকে তার বাবা রাকিব হোসেন ও সৎ মা কলি নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। এখন বাবার নাম শুনলেই শিশুটি আতঙ্কে কেঁপে ওঠে।
শিশুটির খালা শাহনাজ বেগম জানান, আমার ছোট বোন সুমাইয়া আক্তার ও রাকিব হোসেনের সাথে ২০২০ সালে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকতো। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে আমার ছোট বোন সুমাইয়া আক্তার মারা যায়। তখন রাইসার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। এরপর থেকেই রাইসা খালা শাহানাজের কাছেই বড় হচ্ছে এবং খালাকে ‘মা’ বলে ডাকে। কিন্তু বিষয়টি কখনোই মেনে নিতে পারেনি রাইসার বাবা রাকিব। সে মাঝে মাঝে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যেতো, কিছুদিন পর আবার খালার কাছে দিয়ে যেত।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেশী লিজার মা বলেন, রাকিবের দ্বিতীয় স্ত্রী কলি আক্তার রাইসাকে ঘরে রাখতে চাইতেন না। এ নিয়ে রাকিব-কলির মধ্যে কথাকাটাকাটিও হতো। খালার বাসায় কথা বলার সময় রাইসা নিজেও জানায়, তার বাবা তাকে মেরেছে।
খালা শাহনাজের অভিযোগ, ১ অক্টোবর রাকিব ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কলি মিলে রাইসাকে মারধর করে। এতে শিশুটির মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। পরে রাইসার খালা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে প্রথমে রাকিব ফোন ধরেনি। পরে জানান, মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়েছেন। হাসপাতালে গিয়ে খালা দেখতে পান, রাইসার চোখে রক্ত জমে আছে ও মাথা-চোখ ফুলে গেছে। এরপর রাকিব শিশুটিকে খালার কাছেই রাখেন।
গত ২ ও ৩ অক্টোবর রাইসা খালার বাড়িতেই ছিল। পরে ৪ অক্টোবর খালা শাহনাজ শিশুটিকে নিয়ে সাংবাদিকদের ও সদর থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে খোঁজ নেয় এবং রাইসাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাইসার নানি কহিনুর বেগম বলেন, আমার নাতনিকে এমনভাবে মেরেছে যে, ৭ দিন হয়েছে, এখনও ব্যথায় ছটফট করে। চোখে রক্ত জমে ফুলে গেছে। ছোট্ট মেয়েটা এখনো ভয় পায়, বাবার নাম শুনলে কাঁপে। আমি চাই, রাকিব ও কলির বিচার হোক।
অভিযোগের বিষয়ে রাইসার বাবা রাকিব হোসেন বলেন, রাইসা খালাকে ‘মা’ বলে ডাকায় আমি কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু তাকে মারধর করিনি। সে বাথরুমে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি ধানসিঁড়ি পরিবহনে বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করি। আমার মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে ওর খালার কাছে রেখে এসে পেশাগত কাজে পরিবহনের সঙ্গে খুলনা এসেছি। এখানে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি আমি আমার মেয়েকে মেরে রক্তাক্ত করেছি।
তবে রাইসার নানা আব্দুস সত্তার হাওলাদার বলেন, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর এটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত থানায় বসেছিলাম। তারা (থানার ওসি) আমার সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা করার করার পরামর্শ দিয়েছে। আমি আদালতে বিচারের দাবিতে মামলা দায়ের করেছি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার ওসি (তদন্ত) বেলায়েত হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের একটি টিমসহ আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলেছি সবার সঙ্গে। মেয়েটি বাথরুমে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হয়েছে। এজন্যই তার কপালে দাগ ও চোখের নীচ কালো হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আদালতের কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি। নির্দেশনা আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

