শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মধুমতির গর্ভে বিলীন সেনা নির্মিত ১৪টি ব্যারাক, অতি ঝুঁকিতে আরও ৩টি

মেহেদী সোহেল, ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

মধুমতির গর্ভে বিলীন সেনা নির্মিত ১৪টি ব্যারাক, অতি ঝুঁকিতে আরও ৩টি

ফরিদপুরে মধুমতি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে গৃহহীনদের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ১৪টি ব্যারাক। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে মোট ২৬টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়, যেখানে ১৩০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। অতি দ্রুত নদীভাঙন রোধ করা না গেলে বাকি ১২টি ব্যারাকও নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন বসবাসকারীরা। এরই মধ্যে অতি ঝুঁকিতে থাকায় আরও তিনটি ব্যারাকের টিন, ইট ও লোহার অ্যাঙ্গেল খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে ১৩০টি পরিবারের আবাসনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২৬টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে পাঁচটি করে গৃহহীন পরিবার বসবাস করতে পারত। তবে বসবাস শুরুর কয়েক বছরের মাথায় ব্যারাকগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে। ভাঙনের কারণে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৪টি ব্যারাক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছরে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও তিনটি ব্যারাক, যেখানে ১৫টি পরিবার বসবাস করছিল। গত কয়েক দিনে এই তিনটি ব্যারাক অতি ঝুঁকিতে থাকায় স্থানীয়রা ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেল ও ইট খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।


বিজ্ঞাপন


তবে ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেল ও ইট খুলে বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

স্থানীয় বাসিন্দা মর্জিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘মধুমতী নদীভাঙনে আমার দেবরের ঘর ভেঙে যাচ্ছিল। যার কারণে তারা ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তাই তার ঘরের মালামাল খুলে নিয়ে আমাদের কাছে রেখে দিয়েছি। এগুলো বিক্রি করব না, নতুন আরেকটি ঘর করা হবে।’

চাপুলিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার সভাপতি আকুব্বর শেখ বলেন, ‘শুরুতে ১৩০ পরিবারের বসবাস ছিল। প্রতিবছর নদীতে ভাঙতে ভাঙতে এখন আমরা মাত্র ৩০ পরিবার আছি। প্রকল্পের ঘরগুলোর মালামাল গোপনে বিক্রি হচ্ছে কি না আমি জানি না।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) আবুল কালাম কালু বলেন, ‘মধুমতি নদীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে যাওয়ার সুযোগে ওখানকার কিছু লোকজন সরকারি মালামাল বিক্রি করে দিচ্ছে। ঘরগুলি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন নদী অন্তত এক কিলোমিটার দূরে ছিল। এরপর থেকে নদী ভাঙতে ভাঙতে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের দিকে এগিয়ে আসে।’


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘১১-১২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গৃহহীন দরিদ্র মানুষদের জন্য ২৬টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে নদীভাঙনের কবলে পড়ে ১৪টি ব্যারাক সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। আমরা সোমবার (৬ অক্টোবর) ব্যারাকগুলো পরিদর্শন করে ২৬টি ব্যারাকের মধ্যে ১৪টি ব্যারাকের অস্তিত্ব পাইনি। এছাড়া ৩টি ব্যারাক অতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যেগুলো ব্যবহারকারীরা খুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যারাকগুলো রক্ষা করতে হলে অতি দ্রুত নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সে চিন্তা থেকে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

ব্যারাকের ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেল ইত্যাদি সরঞ্জাম অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা বিক্রয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এমন কোনো তথ্য পাইনি। তবে অতি ঝুঁকিতে থাকা যে তিনটি ব্যারাকের ঢেউটিন, লোহার অ্যাঙ্গেলসহ অন্য সামগ্রী খুলে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে, সে বিষয়টি হয়তো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকতে পারে।’

আলফাডাঙ্গার মধুমতি নদীভাঙন বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের ইকড়াইলে মধুমতি নদীর ভাঙন রোধে ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার অনেকগুলো পয়েন্টে নদীভাঙনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, ওই স্থানগুলোর ভাঙন রোধে আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রকল্পটি পাস হয়ে আসতে দুই-তিন মাসের মতো সময় লাগতে পারে, প্রকল্পটি পাস হলেই আমরা আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার মধুমতি নদীর ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হব।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর