অনলাইন প্রতারণার মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার মোঃ মেহেদী হাসান আরাফাত (২৫) নামের এক যুবকের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎকারী হৃদয় হোসেন ওরফে রিফাত (২৫) নামের এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)।
ঘটনার চার মাস পর, মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি দল ঢাকার কদমতলী থানার নুরপুর-দনিয়া এলাকার নাজমা মঞ্জিলের পঞ্চম তলার ৫০২ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে প্রতারক হৃদয় হোসেন ওরফে রিফাতকে গ্রেফতার করে।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যক্তির নামে করা ৩টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১০টি অচল মোবাইল ফোন এবং ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকসহ একাধিক ব্যাংকের ১৮টি ভিসা ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত হৃদয় হোসেন ওরফে রিফাত ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানার হোসেনগাঁও গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে সে ঢাকার কদমতলী থানার নূরপুর এলাকার নাজমা মঞ্জিলের পঞ্চম তলার ৫০২ নম্বর ফ্ল্যাটে বসবাস করছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে গ্রেফতার হওয়া হৃদয় হোসেন ওরফে রিফাতকে পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র বিচারিক হাকিম জহিরুল হকের আদালতে হাজির করা হলে, তিনি দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় নিজের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ পরিদর্শক বেলাল উদ্দিন জানান, সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা গ্রামের যাদব আলীর ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান আরাফাতের সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে হৃদয় হোসেন ওরফে রিফাতের পরিচয় হয়। এরপর রিফাত তাকে জানায়, অনলাইনে টাকা বিনিয়োগ করলে বিপুল পরিমাণ লাভ পাওয়া যাবে।
বিজ্ঞাপন
রিফাতের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে মেহেদী প্রথমে "ডব্লিউ ডব্লিউ ডট ওয়ে ফেয়ার ডট কম" নামের একটি ভুয়া ওয়েবসাইটে ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর তাকে ১১০০ টাকা দেওয়া হয়। পরে তিনি ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ১৬ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। আরও আস্থা পেয়ে মেহেদী ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে তা আটকে দেওয়া হয়। তখন রিফাত জানায়, বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এরপর মেহেদী গত ৩১ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত বিভিন্নভাবে মোট ৩৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন, যা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
এ ঘটনায় মেহেদী হাসান আরাফাত বাদী হয়ে গত ১৮ জুলাই সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-২৩, তারিখ ১৮/০৮/২০২৫ ইং।
পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআই-এর ওপর তদন্তভার দেওয়া হলে, পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচীন চাকমা মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন পুলিশ পরিদর্শক বেলাল উদ্দিনকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি প্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় মঙ্গলবার রাতে প্রতারক হৃদয় হোসেন ওরফে রিফাতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত হৃদয় হোসেন ওরফে রিফাত একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের প্রধান। তিনি ও তার সহযোগীরা অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। শুধু সরাইলের মেহেদীর কাছ থেকেই ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি এবং সে আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছে।
প্রতিনিধি/একেবি

