ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেল মা-মেয়ের। ভেঙে গেল একটি পরিবারের স্বপ্ন। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামে।
মৃত মা ও মেয়ে হলেন- বাঘুটিয়া গ্রামের সমির মণ্ডলের স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাস (৩৪) ও মেয়ে প্রতিভা মণ্ডল (৩)। এতে মা হারা হলো সমির মণ্ডলের ৫ মাস বয়সী মেয়ে জানভি মণ্ডল।
বিজ্ঞাপন
সমির মণ্ডল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
সমির মণ্ডল জানান, তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে মিরপুর-১ টোলারবাগ স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে তার স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাসের জ্বর আসে। পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হলে জয়ন্তীর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর তার মেয়ে প্রতিভা মণ্ডলেরও জ্বর আসে। ১৭ সেপ্টেম্বর মেয়ের ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হলে তারও ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হঠাৎ তার স্ত্রী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সায়েন্স (বিআইএইচএস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর চিকিৎসকরা জানান, তার রক্তচাপ পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর রাত ৯টার দিকে তাকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেলে তাকে ওইদিন রাত ১২টার দিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, মেয়ে প্রতিভা বিশ্বাসের অবস্থার অবনতি হলে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে তাকেও বিআইএইচএস হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তারও মায়ের মতো রক্তচাপ পাওয়া যাচ্ছিল না। যে কারণে তাকে পিআইসিইউতে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালে পিআইসিইউ না থাকায় তাকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে জয়ন্তী বিশ্বাসকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ঐদিন বিকেলেই তাকে বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামের বাড়িতে এনে সমাহিত করা হয়। এছাড়া ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে মারা যান মেয়ে প্রতিভা মণ্ডল। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে প্রতিভাকে বাঘুটিয়া গ্রামে মায়ের পাশে সমাহিত করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সমির মণ্ডল বলেন, ২০১৩ সালে আমি ও জয়ন্তী ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের দীর্ঘ নয় বছরেও আমাদের কোনো সন্তান হচ্ছিল না। অনেক চিকিৎসা করানোর পর ২০২২ সালের ১১ জুন আমার মেয়ে প্রতিভার জন্ম হয়। আমার স্ত্রীর স্বপ্ন ছিল প্রতিভাকে ডাক্তার বানাবে। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। আমার ছোট মেয়েটার বয়স ৫ মাস, সেও মা হারা হলো।
প্রতিনিধি/এসএস

