‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের জেরে সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর, লাঞ্ছিত ও মব সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী উম্মে ফাতিমার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক সমাজ।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিয়াকত আলী বাদল নামের ওই সাংবাদিককে নগরীর কাচারি বাজার থেকে তুলে নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনে মারধরের এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদাল দৈনিক সংবাদ ও বাংলা ট্রিবিউন এবং একুশে টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান হিসেবে রংপুরে কর্মরত।

নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের অভিযোগ করে বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ায় দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি সংবাদ করায় তাকে তুলে নিয়ে সিটি করপোরেশনে মারধর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা কথিত জুলাই যোদ্ধা সন্ত্রাসী রকি ও তার লোকজন আমাকে কাচারি বাজার থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে সিটি করপোরেশনে নিয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং জোর করে ক্ষমা চাইতে বলেন। আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, তাই ক্ষমা চাইনি। আমি নিউজ করেছি, মিথ্যা হলে প্রতিবাদ করবে কিংবা প্রতিবাদ জানাবে। কিন্তু আমাকে তুলে এনে নির্যাতন করবে। ক্ষমা চাইতে বলবে। আমি এই ঘটনার ন্যায়বিচার চাই।
বিজ্ঞাপন
![]()
এদিকে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের প্রতিবাদে রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) সামনে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও পেশাজীবী সাংবাদিকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে রসিকের কর্মচারীরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে সাফাই গেয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। এসময় কর্মচারী ও সাংবাদিকের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে কর্মচারীরা এক প্রকার সিটি করপোরেশন থেকে বের করে দেন সাংবাদিকদের। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, লিয়াকত আলী বাদল একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রংপুর সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব। তাকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর ব্যতিক্রম ঘটলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।
![]()
রিপোর্টাস ক্লাব রংপুরের সভাপতি শাহ্ বায়েজিদ আহমেদ বলেন, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটাই গণতন্ত্রের মূলনীতি অথচ সেখানে সংবাদ প্রকাশের কারণে একজন সাংবাদিককে তুলে এনে মারধর করা নজিরবিহীন ও চরম উদ্বেগজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার প্রত্যাহার চাই। না হলে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, সাংবাদিকের উপর হামলার মাস্টারমাইন্ড সিটি করপোরেশনের সিইও। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এ ঘটনায় আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় মানববন্ধনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাটি জানার পর ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে অবস্থান করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অবশ্যই দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের মাধ্যমে ইতোমধ্যে একজনের নাম জানতে পেরেছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিবদমান ঘটনা নিয়ে আলোচনায় রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমিও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার চাই।
প্রতিনিধি/এসএস

