রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফেসবুকে নিখোঁজ ছেলের ছবি দেখে হাসপাতালে ছুটে এলেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ফেসবুকে নিখোঁজ ছেলের ছবি দেখে হাসপাতালে ছুটে এলেন মা

প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি হঠাৎ তাকে ফোন করে জানান, তার নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সেই ভিডিওতে তিনি দেখতে পান, তার ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আছে আবদুল্লাহ।


বিজ্ঞাপন


হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-পরিচয় কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই তাকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর সে নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম এবং বাসার ঠিকানা জানায়।

চিকিৎসকেরা সেই সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তার পরিবারের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে বাবা-মায়ের খোঁজ চাওয়া হয়। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপরই ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসে নার্সদের সহায়তায় তিনি নিউরোসার্জারি বিভাগে যান। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখতে পান।

মঙ্গলবার বিকেলে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানান, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ এবং আরেক ছেলের বয়স দুই বছর। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। কারণ, এটি প্রথমবার নয় এর আগেও কয়েকবার কোনো কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে সে।

নাজমা বেগম বলেন, ‘প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক ওদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও সে ঢাকার আশপাশে চলে গিয়েছিল। ৬ সেপ্টেম্বর ভাত খাওয়ার পর হঠাৎ বেরিয়ে যায়। আমরা ভেবেছিলাম, আগের মতোই ফিরে আসবে। তাই প্রথমে থানায় যাইনি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। ঢাকার বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গিয়েছিলাম।’


বিজ্ঞাপন


চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাতে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সে সুস্থ হয়ে উঠছে।

চিকিৎসকেরা আরও জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয়, তখন তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে এবং হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তখন তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার দেওয়া তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।

আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটি স্বাভাবিকভাবে ঠিক করা হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। আজ অথবা কালকের মধ্যে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। শিশুটিকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর