নড়াইলে মাছের ঘেরে অফসিজনে ঝুলছে সারি সারি তরমুজ। বাঁশের খুঁটি আর জালের ব্যাগে সযত্নে রাখা ফল। স্থানীয়দের ভিড় পড়ছে বাগানে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ কিনছেন লাল টকটকে তরমুজ। ঘেরপাড়েই অফসিজনের এই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নড়াইলে মোট ২৩ হেক্টর জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর, লোহাগড়ায় ২ হেক্টর ও কালিয়ায় ১১ হেক্টর।
বিজ্ঞাপন
কৃষি বিভাগের সহায়তায় প্রথমবারের মতো অফসিজন তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। এতে খরচ কম, লাভ বেশি। কৃষকরা বলছেন, আগামী বছর আরও বড় পরিসরে আবাদ করবেন। কৃষি কর্মকর্তাদের আশা, জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ চাষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
![]()
সরেজমিনে সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের মির্জাপুর মাঠে আকিনুর মল্লিকের মাছের ঘেরে দেখা যায়, তিনি কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবারই প্রথম তিনি ঘেরের পাড়ে ২০০ চারা রোপণ করে অফসিজন তরমুজ চাষ করেন। গাছের প্রায় প্রতিটি ডগায় ধরেছে ফল।
তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো ৩৩ শতক জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে মির্জাপুর গ্রামে আমিই প্রথম শুরু করি। অফিস থেকে আমাকে বীজ, সার আর প্রয়োজনীয় উপাদান দিয়েছে। বাজারে তরমুজের দামও ভালো। আমার উৎপাদিত তরমুজ বাজারে তুলতে হয় না। ঘেরপাড় থেকেই কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে চাষ করব।
বিজ্ঞাপন
![]()
মির্জাপুর এলাকায় এই প্রথম অফসিজন তরমুজ চাষ হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে যেন এক স্বপ্নের বাগান তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন বহু মানুষ ঘেরপাড়ে ভিড় করছেন, শুধু ঝুলন্ত তরমুজ দেখতে আর ছবি তুলতে। কেউ ভিডিও বানাচ্ছেন, কেউ কিনে নিচ্ছেন টকটকে লাল তরমুজ।
অফসিজনে লাভ দেখে অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন। স্থানীয় জাকির হোসেন বলেন, আকিনুরের তরমুজ দেখে আমরাও উৎসাহ পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী বছর আমিও ঘেরপাড়ে তরমুজ চাষ করব।
তরমুজ দেখতে আসা স্থানীয় তরুণী সুমা আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় আগে কোনোদিন তরমুজ চাষ হয়নি। এ বছর প্রথমবারের মতো হয়েছে। আমরা বান্ধবীরা প্রায়ই এখানে আসি। ছবি তুলি, টিকটক বানাই। মাঝে মাঝে কিনেও নিয়ে যাই।

তিন বছর ধরে ঘেরপাড়ে তরমুজ চাষ করছেন কালিয়া উপজেলার কৃষক প্রদীপ বর্মণ। এ বছর ৯৫ একর ঘেরে ১০ হাজার চারা রোপণ করেছিলেন। এর মধ্যে সাত হাজার ছিল তরমুজের চারা। তিনি বলেন, ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিটি গাছেই একাধিক ফল ধরেছে। বাংলালিংক জাতের তরমুজের ওজন পাঁচ থেকে সাত কেজি। আর তৃপ্তি জাতের তরমুজের ওজন দুই থেকে তিন কেজি। দুই মাসে খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। কয়েক দিনের মধ্যে বিক্রি শুরু হবে। আশা করছি, বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা আয় করতে পারব।
![]()
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, অফসিজন তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছি আমরা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে সহযোগিতা করছেন। প্রণোদনার আওতায় দেওয়া হচ্ছে বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ।
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক মো. জসীম উদ্দীন বলেন, নড়াইলে দিন দিন অফসিজন তরমুজের আবাদ বাড়ছে। এ বছর ২৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আমরা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি।
প্রতিনিধি/টিবি

