আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একটি পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্যে হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২২ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশনা দিলেও বাস্তবে দাম বেড়েছে মাত্র ১ থেকে দেড় টাকা। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় শীঘ্রই আলুর মূল্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেবে সরকার।’ আলুর বাজারজাতকরণে স্থবিরতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে এবং বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতর ও জেলা কৃষি বিপণন অধিফতর সূত্রে জানা গেছে, নির্দেশনা থাকলেও মুন্সিগঞ্জে অধিকাংশ হিমাগারে আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১১ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে, যা নির্ধারিত মূল্যের প্রায় অর্ধেক।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার রফতানিমুখী নীতিতে তৎপর না হওয়া, পাইকারি ক্রেতার সংকট এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তাদের দাবি, গেল মৌসুমে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২৬–২৭ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে জমি প্রস্তুতি, চারা রোপণ, সেচ, সার, শ্রমিক মজুরি, সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যয়। জমি থেকে আলু উত্তোলনের পর মাত্র ৮ মাসের ব্যবধানে তিন দফা দরের পতনে চাষিরা এখন প্রতি কেজিতে ১৩–১৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনছেন। ফলে এবার প্রান্তিক চাষিদের এক বড় অংশ মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
বিজ্ঞাপন
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের তথ্যমতে, চলতি বছর মুন্সিগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলায় মোট ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এতে মোট উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৬০ হাজার ১১৯ টন, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার ৬৯ টন বেশি।
জেলার ৭৪টি হিমাগারের মধ্যে বর্তমানে সচল আছে ৫৮টি, যেগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ৪০ হাজার টন। তবে এর মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ আলু জেলার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও এখানে সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে জেলায় উৎপাদিত আলুর মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টনের কিছু বেশি হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পেরেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ মোট ১৩ হাজার টন আলু ভোগ করেছে।
এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৪৮ হাজার টন আলু দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। তবুও জেলায় এখনও প্রায় ১০ লাখ টনের বেশি আলু হিমাগার ও বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত রয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় বহুগুণ বেশি। এই অতিরিক্ত জোগানই বর্তমানে আলুর দরপতনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
সারাদেশের প্রেক্ষাপটেও একই চিত্র। কৃষি অধিফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবার আলুর মোট চাহিদা ছিল ৭৫–৮০ লাখ টন। তবে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টন।

ফলে সার্বিকভাবে সরবরাহ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় বাজারে দাম কমেছে। মুন্সিগঞ্জে চলতি মৌসুমে কৃষকদের লোকসান হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতর।
তবে কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী, শীঘ্রই আলুর মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।
প্রতিনিধি/একেবি

