বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কুলিক মাঠে অন্ধকারে মাছ ধরার উৎসব

মো. জাহিদ হাসান মিলু
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২২, ০৬:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কুলিক মাঠে অন্ধকারে মাছ ধরার উৎসব

সময় রাত সোয়া ১০টা। ঠাকুরগাঁও টু বালিয়াডাঙ্গী মহাসড়কের কাদশুকা এলাকার কুলিক মাঠ। রাস্তার দু’পাশে থৈ থৈ করছে পানি। চারদিকে অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারে পানির উপরে জোনাকি পোকার মতো জ্বলজ্বল করছে শত শত টর্চের আলো। 

দূর থেকে দেখে মনে হয়, হয়তো মনের আনন্দে আলো জ্বালিয়ে-নিভিয়ে খেলা করছে জোনাকি পোকারা। আসলে তা নয়। বর্ষাকালে প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টি হওয়ার ফলে পানি জমেছে ফসলি কুলিক মাঠে। এই বর্ষা মৌসুমের নতুন পানিতে এসেছে ছোট বড় বিভিন্ন জাতের মাছ। আর এই মাছ ধরতে হাতে টর্চ লাইট, ব্যাগ, বাঁশ ও সুতো দিয়ে তৈরি করা মাছ ধরার পোলো (চাভো) নিয়ে মাছ ধরছেন শত শত মানুষ। এ যেন রাতের আঁধারে মাছ ধরার এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে কুলিক মাঠ।
MACH DHORAবর্ষা এলেই প্রতিবছর ঠাকুরগাঁও জেলার গ্রামগঞ্জের ফসলের মাঠ, খাল-বিলে রাতে এভাবে মাছ ধরার দৃশ্য দেখা গেলেও কুলিক মাঠের দৃশ্যটি ভিন্ন। এখানে রাতে রাস্তার দু’পাশে শত শত মানুষ টর্চের আলোয় মাছ শিকার করেন। 


বিজ্ঞাপন


রোববার (২৬ জুন) দেখা যায়, শূন্য ধুধু প্রান্তরের মাঠটির আনুমানিক কয়েকশ’ একর জায়গাজুড়ে কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ বয়োজ্যৈষ্ঠরা দুই তিনজন মিলে দলবেঁধে একসঙ্গে মাছ ধরছেন। কেউ বা একাই টর্চের আলোয় পোলো দিয়ে মাছ ধরছেন। টেংরা, শিং, কই, মাগুর, পিয়া, গোচি, টাকি, বাইনসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ ধরেছেন তারা।

জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাদশুকা এলাকার কুলিক মাঠে মাছ ধরতে আসেন, উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর শুকানিপাড়া গ্রামের ওয়াহেদুজ্জামান। পেশায় তিনি একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মাছ ধরার শখ কার থাকে না বলেন! রাতে মাছ ধরার শখ আমার ছোটকাল থেকেই। তাই আজ তারাতাড়ি দোকান বন্ধ করে পোলো, লাইট ও ব্যাগ নিয়ে এসেছি এখানে মাছ ধরতে। এসে ঘণ্টদেড়েকের মধ্যে প্রায় এক কেজির মতো বিভিন্ন প্রকার মাছ ধরেছি। কেবল তো শুধু বর্ষাকালে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এখনও সেরকম মাছ হয়নি। আরও পানি হলে বা আর কিছুদিন গেলে এখানে অনেক মাছ পাওয়া যাবে এবং এখানে সন্ধ্যার পর থেকে শুধু শত শত নয় হাজারো মানুষ রাত ১২টা, ২টা, ৩টা কেউ রাতও পার করে দেন মাছ ধরতে।’
MACH DHORAতিনি আরও বলেন, ‘আমি তো এসেছি শখ করে মাছ ধরার জন্য। এখানে বর্ষাকালে অনেকে এভাবে মাছ ধরে বিক্রি করে আয় করেন। আর এখানকার মাছগুলো বাইরেও বিক্রি করতে যেতে হয় না অনেককে। ঠাকুরগাঁও টু বালিয়াডাঙ্গী যাওয়ার প্রধান সড়কের পাশে হওয়া রাস্তায় ধারে মাছ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে রাস্তায় চলাচলকারীরা এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান।’

লালাপুর গ্রাম থেকে মাছ ধরতে আসা আমিরুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, ‘এখনও পুরোপুরিভাবে রাতে মাছ ধরা শুরুই হয়নি। আরও বৃষ্টি হলে কয়েকদিন পরে এখানে সন্ধ্যার পর থেকে হাজারো মানুষ দেখতে পাবেন মাছ ধরছে। প্রতিদিন এখান থেকে প্রতিজন প্রায় কয়েক কেজি করে মাছ ধরেছেন গতবছর, এবারও ধরবেন আশা করছি।’ 

মাছ ধরতে আসা নওশাদ আলী নামে এক কৃষক বলেন, ‘গতবার বর্ষা মৌসুমে এভাবে মাছ ধরে খেয়েছি। প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছি বিক্রি করেছি। আশা করছি এবারো গতবারের মতো মাছ বিক্রি করবো।’
MACH DHORAতিনি বলেন, ‘প্রথম প্রথম ভয় লাগলেও এখন আর ভয় লাগে না। মাছ ধরার সময় পানিতে অনেক সাপ দেখেছি, সাপের মুখোমুখিও পড়েছি কখনো কখানো। জোঁকেও অনেক কেটেছে। রাতে মাছ ধরার সয়ম অনেকবার পোলো দিয়ে মাছকে চাপ দিয়ে ধরতে গেলে দেখা গেছে মাছ চাপা না পড়ে পোলোতে সাপ ছাপা গেছে ও মাছ মনে করে হাত দিয়ে সাপ ধরেছি। এগুলোকে ভয় করলে আর মাছ ধরা হবে না কোনদিন। আসলে বর্ষাকালে মাছ ধরা একপ্রকার নেশা হয়ে গেছে।’


বিজ্ঞাপন


উপজেলার বারঢালি গ্রাম থেকে মামার সঙ্গে মাছ ধরতে এসেছেন সাকিব নামে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর। বলেন, ‘মামার বাড়িতে এসেছি দুইদিন হলো। কালকে মামা মাছ ধরতে এসেছিল, আমি তার সঙ্গে আসতে চাইলে কালকে আমাকে নিয়ে আসেনি মামা। আজকে আবার সন্ধ্যায় মামা মাছ ধরার জন্য বের হলে লাইট ও পোলো নিয়ে আমিও মামার পেছন পেছন চলে আসি।’

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর