প্রথম দেখায় মনে হতে পারে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এটা কোন বন। কিন্তু বুড়িভদ্রা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা সারি সারি গাছের বন মানুষের হাতে লাগানো। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় দৃশ্যমান কাঁঠালতলা-চুকনগর আশ্রয়ণ বাইরে নদীর তীরবর্তী ১৫ কিলোমিটার এ সৃজিত বনায়ন তৈরি করেছে উপজেলা বন বিভাগ। সামাজিক বনায়নের আওতায় এখানে নানা প্রজাতির ১৫ হাজার ফলদ, বনজ ও ওষধি বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের উপর দিয়ে যতদূর চোখ যায় সবুজের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে জারুল, বাবলা, খয়ের গাছের সবুজ পাতা। প্রকৃতি তার সব সবুজ ঢেলে দিয়েছে ভদ্রা নদীর পাড়ে। নদীর পাড় দিয়ে উঁচু মাটিতে সাজিয়ে গুছিয়ে লাগানো হয়েছে গাছগুলো। প্রচণ্ড রোদে নদীতে মাছ ধরতে ধরতে অনেকেই এই গাছের শীতল ছায়ায় শরীর এলিয়ে দেয়। ক্লাশ শেষে অনেক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসে এখানে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা বনবিভাগ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে উপজেলার বুড়িভদ্রা নদী খননের মাটি দ্বারা নদী তীরবর্তী গ্রামরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে ১৫ কিলোমিটার সৃজিত বনায়ন করা হয়। সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় উপজেলা বনবিভাগ-এ বনায়ন গড়ে তুলেছে। এলাকার ভূমিহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে ৭১ জন উপকারভোগী নির্বাচন করে প্রতি ৬ ফুট অন্তর অন্তর এ চারাগুলো রোপণ করা হয়। এভাবে প্রতি কিলোমিটারে এক হাজার করে মোট পনের হাজার আম, জাম, কাঁঠাল, মেহগনি, অর্জুন, জারুল, বাবলা, খয়ের, আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, দৃষ্টিনন্দন এ বনায়ন খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় অনেক ভ্রমণ পিপাসু ও বৃক্ষ প্রেমীরা এখানে ভিড় জমান। বনায়নের ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা হবে।
খুলনা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বনায়নের কথা জানতে পেরে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মোহসীন রেজা। ঢাকা মেইলের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমরা যারা শহরে বসবাস করি প্রকৃতির কাছে তাদের যাওয়ার সুযোগ কম হয়। কিছু সময়ের জন্য হলেও বন্ধুরা মিলে এখানে নির্ভেজাল নিশ^াস নিচ্ছি। যেসব ওষধি গাছ এখানে রয়েছে সচারচার সেগুলো এখন আমরা দেখি না। এখানে এস দেখার সুযোগ হচ্ছে।
সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান মালি বলেন, আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদেও পাশ থেকে শুরু করেও কাঠালতলা পর্যন্ত এই বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণে আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে উপজেলা বনবিভাগ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এমন বনায়ন দেশের সবখানে করা উচিত।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী খান ঢাকা মেইলকে বলেন, চুকনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পূর্বপাশ হতে কাঠালতলা বরাতিয়া পূর্ব পাশ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার ব্যাপী সৃজিত বনায়ন তৈরি করা হয়েছে। নদীর বাধের উপর দিয়ে মূলত এসব গাছ লাগানো হয়েছে। যার মধ্যে পনের হাজার নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। ইতোমধ্যে গাছ বড় হতে শুরু করেছে। রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য জনপ্রতিনিধিদেও সমন্বয়ে কমিটি কওে দেয়া হয়েছে। গাছগুলো বড় হলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সুন্দর স্পটে পরিণত হবে।
সঠিক পরিচর্যা ও তদারকিতে অতি অল্প সময়ে গাছগুলো বেড়ে এখন অনেকটা দৃশ্যমান বনায়ন। দূরদূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে।

