- খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের জরুরি সংস্কার
- দুর্নীতির তদন্ত ও দায়ীদের বিচার
- টেকসই ও নিরাপদ সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন
- সওজ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করা
মাত্র ৫ বছর আগে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক এখন পরিণত হয়েছে একটি মরণফাঁদে। গুরুত্বপূর্ণ এই আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিশাল গর্ত, খানাখন্দ আর কর্দমাক্ত জলাবদ্ধতায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর প্রতিবাদে ব্যতিক্রমী এক কর্মসূচিতে অংশ নেয় খুলনার বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। তারা সড়কের জলাবদ্ধ স্থানে মাছ ছেড়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রের সামনের মহাসড়কে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখা। মাছ ছেড়ে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যেন দ্রুত সড়ক সংস্কার করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ও নিসচার উপদেষ্টা ড. মো. সামিউল হক। তিনি বলেন, ‘সরকারি টাকায় নির্মিত এই সড়ক এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শুধু দুর্নীতিরই নয়, জননিরাপত্তার সরাসরি হুমকি।’
নিসচার খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুন্না-এর সঞ্চালনায় এবং সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন-এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার; সাসটিভা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ মোস্তাফিজুর রহমান; এনসিপি খুলনার প্রধান সংগঠক আহম্মদ হামীম রাহাত; দৈনিক প্রবাহের সাংবাদিক কামাল হোসেন; ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা।
এই মহাসড়কটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত রুট। অথচ মাত্র ২০২০ সালে শেষ হওয়া নির্মাণকাজের পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে গর্ত, খোয়া উঠে যাওয়া, এবং বর্ষা মৌসুমে রাস্তায় জমে থাকা পানি এখন সাধারণ যাত্রীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জিরোপয়েন্ট থেকে চুকনগর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের পুরো পথজুড়ে কোথাও ভাঙা রাস্তা, কোথাও কাদা-পানিতে থইথই অবস্থা। যানবাহন উল্টে গিয়ে প্রাণহানিও ঘটছে প্রায় নিয়মিত।
১৫০ কোটি টাকার কাজ, তবু এই দশা কেন?
বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে। এর সঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)-এর চরম অবহেলা এবং নজরদারির অভাবও দায়ী। তারা বলেন ‘প্রকল্পের নাম বড়, ব্যয় বিশাল; কিন্তু বাস্তবে রাস্তা যেন চলাচলের অযোগ্য নালায় পরিণত হয়েছে।’
বক্তারা বলেন, ‘রাস্তার গর্তগুলোতে যে পানি জমেছে, সেখানে এখন মাছ ছাড়া যায় এমন পরিস্থিতি কল্পনাতীত। তাই আমরা বাস্তব চিত্র তুলে ধরতেই জলাবদ্ধ জায়গায় মাছ ছেড়েছি।’ এই অভিনব প্রতিবাদের মাধ্যমে তারা জনদুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেন এবং দ্রুত সংস্কার কাজ শুরুর জোর দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম শুরু না হয়, তাহলে পরবর্তী ধাপে আমরা সড়ক ভবন ঘেরাও কর্মসূচি ও গণআন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও যানবাহন চালকরা জানান, প্রতিদিন তারা এই সড়কে চলাচলের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো চরম দুর্ভোগে পড়ছে।
প্রতিনিধি/একেবি

