ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আবার কমে যাওয়ার পর নদীর পাড়জুড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ভাঙন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এতে নদী তীরের মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। দিন দিন বাড়ছে ভাঙন। হুমকির মুখে বসতবাড়ি, তিন ফসলি জমি, বিভিন্ন বাগান ও রাস্তা।
সদর উপজেলার যুবরাজ কাবারীপাড়া, পল্টনজয়পাড়া, বেলতলীপাড়া, চেঙ্গীব্রিজ, রাজবাড়ি মারমাপাড়া, গঞ্জপাড়া, দক্ষিণ গোলাবাড়ি, রাজ্যমনিপাড়া, কালাডোবাপাড়া, বটতলী, ফুটবিল, কমলছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সদর উপজেলার নদীর পাড়ে দক্ষিণ গঞ্জপাড়ার কৃষকরা চাষ করে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে সংসার চালান। এখন তাদের সম্বল ফসলি জমি ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ৬৪ কৃষক।
কৃষক ক্যচিং মর্গ, আপ্রুমা মর্গ ও হেমাচং মর্গ বলেন, আমাদের বারো মাস সবজি চাষ করে জীবিকা চলে। নদী ভাঙনে জমি বিলীন হচ্ছে। আগাম শীতের বিভিন্ন সবজি বীজ বপন করেছি। নদী ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে না পারলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে দক্ষিণ গোলাবাড়ির ৬৫ পরিবার।
সদরের যুবরাজ কাবারীপাড়ার মন্টু চাকমার ঘর অর্ধেক বিলীন হয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, দুই মাস হয়েছে ভাঙনে ঘরের অর্ধেক পড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ফল গাছ বিলীন হয়েছে। দিনমজুরি করে খাই। অন্য জায়গা কিনে ঘর তুলে চলে যাওয়ার সার্মথ্য নেই। দিন-রাত ভয় লাগে, তারপরও থাকতে হচ্ছে।
যুবরাজ কাবারীপাড়ার জীবনপর্ব চাকমা, জিয়দয় চাকমা ও শান্তিপর্ব চাকমা জানান, গত পাঁচ-সাত বছরে এই গ্রাম থেকে ১৫ পরিবারের ঘর বিলীন হয়েছে। সবাই অন্য জায়গায় বসবাস করছে। এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি।
বিজ্ঞাপন
সদরের রাজবাড়ি এলাকায় তিনটি ঘর বিলীন হওয়ার পথে। এর মধ্যে রান্না ঘর ও গোয়াল ঘর ও ফল গাছ বিলীন হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অংগজাই মারমা ও আনাই মর্গ বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পার ভেঙে রান্না ঘর, গোয়াল ঘর, নারকেল, আম ও কাঁঠাল গাছ ও ষোল হাত ভূমি বিলীন হয়েছে। রাতে ঘুমাই আতঙ্কে। এই ঘরটি বিলীন হয়ে গেলে কোথায় গিয়ে উঠব। দ্রুত কছিু করে ভাঙন ঠেকানো দরকার।
এই দিকে ভারি বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে ছড়ার পানির স্রোতে খাগড়াছড়ি সদরের মহালছড়া নামের এক ছড়ার দুই পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। মহালছড়া ও দেওয়ানপাড়া এলাকার ছড়ার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বাগান, বসতবাড়ি, পোলট্রি খামার। আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে এখানকার মানুষরা। ভারি বৃষ্টি হলে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়।
মহালছড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জ্যোতিময় ত্রিপুরা, প্রতিময় ত্রিপুরা ও বনলতা ত্রিপুরা বলেন, ছড়ার দুই পাড়ে ভাঙনের কারণে আমাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দুই বছর আগে পাড়ায় যাতায়াতের কার্লভার্ট ধসে পড়ে গেছে। আমরা মৌসুমের বিভিন্ন ফসল চাষ করে সংসার চালাই।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিখিল চাকমা বলেন, বিভিন্ন এলাকার ভাঙন পরিদর্শন করে উপজেলা পর্যায়সহ সবগুলো মিলে একশ’র ওপরে ভাঙন পয়েন্টের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। পুরোটাই যদি অসুস্থ হয় ওষুধ দিবেন কোথায়, ওই ধরনের আর কি।
এর মধ্যে যতটুকু বরাদ্দ হয়ে আসে সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
প্রতিনিধি/এফএ

