জুলাইয়ের টানা দশ দিনের অতিবৃষ্টির কারণে খুলনায় আমনের বীজতলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় ক্ষতি কাটিয়ে দ্রুত বীজতলা তৈরি করা হয়েছে এবং জেলার ৯০ শতাংশের বেশি আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এতে করে খুলনায় আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, খুলনার ৯ উপজেলা ও খুলনা মেট্রো এলাকায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে মোট ৯৩ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৩ শত ৭৬ মেট্রিক টন।
বিজ্ঞাপন
জেলায় বীজতলার টার্গেট ছিল ৫ হাজার ৩২৫ হেক্টর, যার মধ্যে ৫ হাজার ২৬০ হেক্টরই তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে ১০৬ হেক্টর জমির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকরা দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ১৩ হাজার কৃষকের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হলেও সরকারের সহায়তায় বীজ ও সার সরবরাহের মাধ্যমে পুনরায় বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে প্রতি কৃষককে ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ডিএপি সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল ও সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে উন্নতমানের বীজ সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের কৃষক রবিউল জানান, ‘অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বীজতলা নষ্ট হয়েছিল। তবে কৃষি অফিসের সহায়তায় পুনরায় বীজতলা তৈরি করেছি এবং আশা করছি খুব শিগগিরই রোপণ সম্পন্ন হবে।’
বটিয়াঘাটার গাওঘারা গ্রামের আরেক কৃষক বলেন, ‘বৃষ্টির ধাক্কা পেরিয়ে কৃষি অফিস থেকে নতুন বীজ পেয়েছি, ফলে ফলন আশা করছি আগের চেয়ে ভালো হবে।’
বিজ্ঞাপন
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, ‘খুলনার কৃষি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা। এসবের মোকাবেলায় বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। চলমান পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে সংরক্ষিত ১০৩ জাতের আধুনিক বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি চলতি মৌসুমে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।’

বৃষ্টির ধাক্কা পেরিয়ে খুলনায় আমনের আবাদে এই উজ্জীবন কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এবং জেলার খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন আশা জাগিয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি

