‘খেলার মাঠ, পার্ক, উন্মুক্ত স্থান আর গণপরিসর তারুণ্যের অধিকার না দায়’?- শীর্ষক তারুণ্যের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ০৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় গ্রিন ভয়েসের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গ্রিন ভয়েস-এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির-এর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, গ্রিন ভয়েস-এর উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া, গ্রিন ভয়েস-এর সহ-সমন্বয়ক আরিফুর রহমান ও ফাহমিদা নাজনীন, আহসান হাবিব, পরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদ প্রার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, জহির রায়হান, সমাজসেবা সম্পাদক পদ প্রার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদ, ইকরা আক্তার, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদ প্রার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাপসী রাবেয়া হল সংসদ, সায়মা হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক পদ প্রার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মন্নুজান হল সংসদ, গ্রিন ভয়েস ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি আসাদুল ইসলাম, গ্রিন ভয়েস ইডেন কলেজ শাখার সংগঠক নুসরাত ইমরোজ তিষা, গ্রিন ভয়েস তেজগাঁও কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার কবির হৃদয়, গ্রিন ভয়েস সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার সংগঠক মাহমুদুল হাসান তাসিন, গ্রিন ভয়েস বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ শাখার সংগঠক আসফিয়া তাসনিম, গ্রিন ভয়েস সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার প্রচার সম্পাদক শান্ত মৃধা রোহিত, গ্রিন ভয়েস হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিহাব হোসেন, গ্রীন ভয়েস সরকারি হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ শাখার আহ্বায়ক জুয়েল রানা, গ্রিন ভয়েস সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার সংগঠক রাতুল হাসানসহ গ্রিন ভয়েস এর কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধিবৃন্দ।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকায় খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান ভয়াবহভাবে কমে যাচ্ছে। ১৯৯৫ সালে যেখানে সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৫২.৪৮ বর্গ কি.মি., ২০২৩ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ২৯.৮৫ বর্গ কি.মি. তে। বর্তমানে রাজধানীতে প্রতি ১,০০০ জনের জন্য উন্মুক্ত জায়গা রয়েছে মাত্র ০.০২ একর, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের তুলনায় অপ্রতুল। অনেক মাঠ-উদ্যান দখল, বাণিজ্যিক ব্যবহার ও তালাবদ্ধ অবস্থার কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
তিনি বলেন, এই সংকট থেকে উত্তরণে বিদ্যমান মাঠ ও পার্ক সংরক্ষণ, নতুন সবুজ পরিসর গড়ে তোলা, দখলমুক্তকরণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন্ধ এবং নগর বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন জরুরি। তরুণদের অংশগ্রহণ ও জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে নগরের মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
সিনিয়র সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া বলেন, গণপরিসর রক্ষা শুধু তরুণদের দাবি নয়, এটি সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্ন। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, খেলার মাঠ, পার্ক এবং উন্মুক্ত স্থান টিকিয়ে রাখতে তরুণদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এলে জনচাপ সৃষ্টি হবে, আর সেটিই পারে এসব জায়গা দখল ও অব্যবস্থাপনা থেকে রক্ষা করতে।
বিজ্ঞাপন
সুমাইয়া শারমিন বলেন, খেলার মাঠ ও পার্ক তরুণদের বিকাশের জন্য অপরিহার্য, এগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগী হতে হবে।
নুসরাত ইমরোজ তিষা বলেন, নগরায়ণ ও দখলবাজির কারণে উন্মুক্ত স্থান ক্রমশ কমে যাচ্ছে, আর এর ফলে তরুণরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত মাঠ ও পার্ক শুধু তরুণদের বিকাশের জন্য নয়, নারীরাও সেখানে অবাধে, নিরাপদে ও কোনো বাধা ছাড়া খেলাধুলা করতে পারে—এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
আসফিয়া তাসনিম বলেন, মাঠ ও পার্ক শুধু বিনোদনের স্থান নয়, সামাজিক মেলবন্ধনেরও মাধ্যম।
মাহমুদুল হাসান তাসিন বলেন, মাঠের সংকট তরুণদের খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের সুযোগ সীমিত করছে।
শাহরিয়ার কবির হৃদয় বলেন, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান দখল হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষ হাঁটাহাঁটি ও অবসর সময় কাটানোর জায়গা হারাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আনোয়ার উদ্যান দ্রুত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। মার্চ মাসে উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি, যা নাগরিকদের প্রতি অবিচার।
জুয়েল রানা বলেন, নগর পরিকল্পনায় পর্যাপ্ত মাঠ ও পার্ক রাখতে হবে।
শান্ত মৃধা রোহিত বলেন, তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য গণপরিসর উন্মুক্ত রাখা অপরিহার্য।
আহসান হাবিব বলেন, খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান প্রাপ্তি তারুণ্যের নিকট অন্যান্য মৌলিক অধিকারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
জহির রায়হান বলেন, গণপরিসর দখল হওয়ায় তরুণদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।
ইকরা আক্তার বলেন, সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে খেলাধুলার পরিবেশ ও উন্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করতে হবে।
সায়মা হোসেন বলেন, তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশ ও দক্ষতা অর্জনেও মাঠ ও পার্ক অপরিহার্য।
গ্রিন ভয়েস-এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, ঢাকা শহর দিনে দিনে কংক্রিটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ভূমিদস্যুদের দখলের কারণে খেলার মাঠ, পার্ক ও উদ্যান ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ওসমানী উদ্যান দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে তথাকথিত উন্নয়নের বেড়াজালে বন্দি রয়েছে। শহরের মানুষের সুস্থভাবে শ্বাস নেওয়ার প্রতিটি উৎস আজ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এর ফলে একদিকে শারীরিক অসুস্থতা বাড়ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের সুস্থ বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। বিনোদন ও অবসরের সুযোগ না থাকায় অনেক তরুণ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
সেই লক্ষ্যে, আমরা আজকের এই কর্মসূচি থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি এবং দৃঢ় পদক্ষেপ কামনা করে নিচের দাবিসমূহ উত্থাপন করছি।
১। নগরের সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে প্রতিটি নগরের জন্য স্বীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী সবুজ এলাকা, পার্ক, খেলার মাঠ, গণ-পরিসর, ও প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিতকল্পে একটি রূপরেখা প্রণয়ন;
২। বিদ্যমান সবুজ এলাকা, পার্ক ও খেলার মাঠ সুরক্ষার পাশাপাশি তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ‘আন্তঃসবুজ সংযোগ’ স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
৩। জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও স্বল্পব্যয়ী প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের অভ্যন্তরের সবুজ, গণ-পরিসর, ও অব্যবহৃত স্থান সমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৪। রাজধানী ঢাকার জন্য প্রণীত ড্যাপ ২০২২-৩৫-এ প্রস্তাবিত আঞ্চলিক পার্ক, জলকেন্দ্রিক পার্ক, ইকোপার্ক সহ অন্যান্য প্রস্তাবিত পার্কগুলো চিহ্নিত করে এসকল পার্কের নির্মাণ বাস্তবায়ন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা প্রদান।
প্রতিনিধি/ এজে

