রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সফল উদ্যোক্তা দম্পতি এস এম রিজন ও রিসা আফরিন। ভিন্ন কিছু করার তীব্র বাসনা, মনের মধ্যে বুনতে থাকা স্বপ্ন এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে অনিশ্চয়তার সাগরে ঝাঁপ দেন। অতঃপর দুর্গম দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সফল উদ্যোক্তার তকমা ছিনিয়ে নিয়েছেন তারা। এই দম্পতি সিল বানিয়ে মাসেই আয় করছেন লাখ টাকা।
রিজন ও রিসা বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে দৃঢ় সাহসের সঙ্গে শুরু করেন সিল (দাফতরিক কাজের জন্য ব্যবহৃত মোহর) বানানোর কাজ। ব্যর্থতার বেড়াজাল, নানা সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আজ তারা ‘বেঙ্গল’স সিগনেচার’ নামে একটি সিল তৈরি এবং প্রদর্শনী শো-রুম করেছেন। যা ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে দেশব্যাপী। মানসম্মত ও চমৎকার ডিজাইন হওয়ায় অফলাইন-অনলাইনে দেশ-বিদেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ায় পাচ্ছেন বাড়তি সাড়া।
বিজ্ঞাপন
রিজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের (তৃতীয় বর্ষ) শিক্ষার্থী এবং রিসা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনে (দ্বিতীয় বর্ষ) অধ্যয়নরত।

তাদের যাত্রার শুরুটা হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, মাত্র ৩৬০ টাকা দিয়ে। ঢাকা থেকে কিছুসংখ্যক সিল বানিয়ে এনে অর্ডার নিতে শুরু করেন তারা। বিভিন্ন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ এবং অফলাইনে পরিচিতজনদের কাছে চান অর্ডার। অল্প সময়ে পান কাঙ্ক্ষিত সাড়া। কিন্তু তখন তারা ছিলেন ঢাল-তলোয়ার ছাড়া এলোমেলো অবস্থায়। বিনিয়োগের জন্য একদিকে ছিল না অর্থ, অন্যদিকে জানতেন না কীভাবে সিল তৈরি করতে হয় বা কাঁচামাল পাওয়া যায় কোথায়।
![]()
বিজ্ঞাপন
এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে আরেকটি বড় বাধা ছিল পরিবার। রিজনের বাবা ছিলেন এমন ব্যবসার ঘোর বিরোধী। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে সিল বানাবেন বিষয়টি ছিল তার কাছে চরম দৃষ্টিকটু। তবে মায়ের মানসিক সাপোর্ট এবং বড় ভাইয়ের থেকে পাওয়া কিছু অর্থ এগিয়ে যেতে সাহস জোগায় তাকে। অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চীন থেকে সিল তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে কাজ শিখতে মনোযোগী হন তারা। প্রথম দিকে কিছুটা লোকসানও হয়। অনেক সামগ্রী নষ্ট হলেও ধীরে ধীরে কাজ শিখে আঁধাপাকা টিনের দোকান নিয়ে বসেন তারা। তবে এখন সুসজ্জিত শো-রুম হয়েছে রাজশাহী মহানগরীর বিনোদপুর বাজারে। মাসে প্রায় ৪০০-৫০০ সিল তৈরি এবং সরবরাহ করছেন এই দম্পতির গড়া প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন ৮-১০জন শিক্ষার্থীর। রাজশাহীতে তেমন কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় পার্টটাইম জব পেয়ে খুশি বেঙ্গলস সিগনেচারের জব হোল্ডাররা। প্রতি মাসে কর্মীদের প্রায় ৭০ হাজার টাকা বেতন দেওয়াসহ যাবতীয় খরচ শেষে মাসে লাভ করছেন লক্ষাধিক টাকা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয় রিজন-রিসা দম্পতির সঙ্গে। তারা বলেন, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কিছু করার ইচ্ছা ছিল। সেই থেকেই ভিন্ন কিছু নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা মাথায় আসে। ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে খেয়াল করলাম অনলাইনে সিল সরবরাহ করে এমন কোনো ভালো প্লাটফর্ম নেই। সেখান থেকে লক্ষ্য স্থির করে কাজ শুরু করা। যখন কাজ শুরু করি তখন কোনো ধারণা ছিল না কীভাবে কি করতে হবে। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে শিখেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা বর্তমানে একটা অবস্থানে আসতে পেরেছি।

বর্তমানে বেঙ্গলস সিগনেচারের মাধ্যমে সারাদেশে ফ্ল্যাশ সিল পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। সিল একটা শৌখিন প্রোডাক্ট। কাস্টমারের সর্বোচ্চ চাহিদা অনুযায়ী আমরা বানানোর চেষ্টা করি। যেন একটা সিল দেখে বোঝা যায়, নিশ্চয়ই এটা কোনো শৌখিন একজন মানুষের চিন্তা চেতনা এবং মনন থেকে তৈরি। এছাড়াও আমাদের অফিসে বর্তমানে ৮ থেকে ১০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছি। এই ছোট্ট সুযোগ তৈরি করাটাই আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।
প্রতিনিধি/এসএস

