শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের মাদবর কান্দি গ্রাম। গ্রামজুড়ে এখন গভীর শোকের ছায়া।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে দুই নিষ্পাপ শিশুর প্রাণহানি এবং আরেক শিশুর মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনায় মুহূর্তেই নেমে আসে হৃদয়বিদারক কান্না।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাদবর কান্দি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা তিন শিশু—ইমন হোসেন (৫), তাউহিদ (৫) এবং জান্নাত (৩) বাড়ির পাশেই খেলছিল। শিশুদের খেলার আনন্দ ধীরে ধীরে পরিণত হয় বিষাদে। এক পর্যায়ে তারা পাশের একটি পুকুরে নেমে যায়। কিছু সময় পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
শিশুদের হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়ে পরিবার ও গ্রামজুড়ে শুরু হয় উৎকণ্ঠা। চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু হলে কিছুক্ষণ পর পুকুরের পানিতে ভেসে ওঠে একটি নিথর দেহ। মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো গ্রাম। পরে স্থানীয়রা পুকুরে নেমে উদ্ধার করে আরও এক শিশুর মরদেহ। তবে তখনও তৃতীয় শিশু জান্নাত নিখোঁজ।
অবশেষে কিছুক্ষণ পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে পুকুরের পাড় থেকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে জান্নাতের চিকিৎসা চলছে।
নিহত ইমন হোসেনের বাবা বাদল সরকার এবং তাউহিদের বাবা শাহ আলম ব্যাপারীর পরিবারের বুকফাটা আহাজারিতে পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে। দুই ফুটফুটে প্রাণের নিথর দেহ দেখেই স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। গ্রামের প্রবীণরা বলছিলেন, এমন দৃশ্য জীবনে সহ্য করা যায় না। খেলার ছলে এত অল্প বয়সে তাদের চলে যাওয়া কারও পক্ষেই মেনে নেওয়া কঠিন।
স্থানীয় আজগর ও ছাব্বির জানান, প্রতিদিনই তারা পাড়ায় খেলাধুলা করত। আজও স্বাভাবিকভাবেই খেলছিল। হঠাৎ তাদের খুঁজে না পেয়ে সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুকুর থেকে দুই শিশুর লাশ আর এক শিশুকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর গ্রামে কান্নার রোল পড়ে যায়।
![]()
এ বিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুল হক বলেন, খেলতে গিয়ে তিন শিশু পুকুরে নেমেছিল। এর মধ্যে একই পরিবারের এক শিশু নিহত এবং আরেকজন আহত হয়েছে। অন্য পরিবারেরও একটি শিশু মারা গেছে। জীবিত শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে পুরো মাদবর কান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্প ও আশপাশের গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশুদের অকালমৃত্যু যেন সবাইকে নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। পুকুরপাড়ের সেই খেলাঘর আজ পরিণত হয়েছে অশ্রুভেজা স্মৃতিস্তম্ভে।
প্রতিনিধি/এসএস

