কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্র কস্তুরাঘাটস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়।
অভিযানের শুরুতে অবৈধ দখলদারদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। এসময় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া অভিযানে উচ্ছেদের পর স্থাপনার মালামাল ও ভরাট মাটি প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। যা সরিয়ে নিচ্ছে নিলাম ডাককারী।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট-খুরুশকূল সংযোগ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান শুরু করতে গেলে দখলদাররা বাধা প্রদান করা। এসময় ছোঁড়া ইটের আঘাতে পুলিশের এক সদস্য আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান।
আহত পুলিশ কনস্টেবল করিমকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আটকদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ওসি ইলিয়াস খান বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনে বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদ শুরু করে। অভিযানে বিআইডব্লিউটিএর কর্মীদের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
![]()
তিনি বলেন, বেলা ১১টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে গেলে অবৈধ দখলদারের লোকজন বাধা দেন। এসময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে দখলদারের একটি অংশ পেছন থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে ইটের আঘাতে পুলিশের এক সদস্যের মাথা ফেটে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সময় হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে পুলিশ তিন জনকে আটক করেছে।
ওসি বলেন, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিআইডব্লিটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, সোমবার থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযান মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ একরের বেশি জায়গা উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রথম দিন উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মালামাল ও ওখানে ভরাট করা মাটি ১৫ ফুট পর্যন্ত প্রকাশ্য নিলামে দেওয়া হয়েছে। ৬ লাখ টাকায় নিলাম ডাককারী তা সরিয়ে নিয়ে নদীর আগের অবস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদের পর আবারও নিলাম দেওয়া হবে।
![]()
বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটারের বাঁকখালী নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এই ছয় কিলোমিটারে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ভূমি অফিস এবং বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের পৃথক তালিকা তৈরি করেছে। সহস্রাধিক অবৈধ দখলদার থাকলেও দুই তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালী।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র মতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদী তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। জমি বুঝিয়ে দিতে বার বার জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা তা দেয়নি। ফলে নদী বন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় দখল অব্যাহত ছিল।
আরও পড়ুন
যার সূত্র ধরে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।
এর মধ্যে বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ অগাস্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
![]()
মামলার রায়ে বলা হয়, কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এর সূত্র ধরে শনিবার কক্সবাজার সফরে আসেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক বাঁকখালী নদী দূষণ ও দখলমুক্তকরণের লক্ষ্যে বিশেষ সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় তিনি কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর দখলদারদের সমন্বিত তালিকা করে উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন। এর সূত্র ধরেই সোমবার শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে নদী দখল করে নির্মিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরপর নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

