বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে। কিন্তু এই ট্রেন থামানোর ষড়যন্ত্র চলছে। যারা নির্বাচনী ট্রেনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাই নিজের এবং দলের ক্ষুদ্র স্বার্থে জনগণের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করবেন না।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত র্যালি পূর্ব সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম। এর আগে সকালে জেলা বিএনপির আয়োজনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি গাছের চারা বিতরণ করেন। এছাড়া দলীয় কার্যালয়ের সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সমাবেশে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার বক্তব্যের শুরুতে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ দলের প্রয়াত সব নেতাকর্মীকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। এছাড়াও দলের সাবেক জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুর রব খান, চৌধুরী শহিদুল ইসলাম নয়ন, শামসুল-হুদাসহ দলের প্রয়াত সব নেতা কর্মীকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
সমাবেশে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, দেশের সংকটকালে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মো. ইউনুস জাতির সামনে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি এবং তার সরকারের সদস্যরা উপলব্ধি করেছেন, অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে চলতে পারে না। সেটি দেশের জন্য মঙ্গল হয় না। সেই উপলব্ধি থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। আসুন বিএনপির মতো ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তি তাকে সহযোগিতা করি। জনগণের প্রত্যাশার নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণ করি। যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা, দরিদ্র মুক্ত। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করলে, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ তার পছন্দের ব্যক্তিকে বেছে নিতে পারবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তি মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে থাকার পরও দুর্ভাগ্যবশত আজ তাদের মুখ থেকে নব্য ফ্যাসিবাদের প্রতি ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। দেশে গণতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাবে। জনগণ যার ওপর আস্থা রাখবে তাকেই ভোট দেবে। যাদের নিজের এলাকা থেকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসা কঠিন, তারাই প্রচলিত নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তে পিআর পদ্ধতির কথা বলছে। তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সব শক্তি নিয়ে বিএনপি আগামী নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবেন। বিগত তিনটি নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করেছিলেন। সেই নির্বাচনে দেশের তরুণ-যুবকসহ সমগ্র জনগণের ভোটের অধিকারকে রুদ্ধ করা হয়েছিল। সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির ষড়যন্ত্র হচ্ছে, কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা জনগণকে ভয় পায়। ভোট হলে জনগণ যদি বিএনপিকে ভোট দেয়। আপনি রাজনীতি করেন দেশ ও জনগণের জন্য। আপনি যদি জনগণকে ভয় পান, তাহলে আপনার রাজনীতির করার কথা নয়, নাগরিক সমাজের অংশ হয়েছেন। জনগণের দল হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ হবেন, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা তরুণ-যুবকদের ভোটের অধিকার রুদ্ধ করতে চায়, তাদের মধ্যে আর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কোনো পার্থক্য নেই। শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে গণতন্ত্রহীন রেখে জুলুম নির্যাতন করেছিলেন, সেই রকম অবস্থায় জনগণ আর ফিরে যেতে চায় না।

অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। নিজেদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া জোরদার করে জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। দেশের রাজনীতির আকাশে আবারও কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের অনেক ষড়যন্ত্র এবং নীল নকশা দেখেছি। ষড়যন্ত্রের সমাধান সূত্র হচ্ছে, নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী এবং মজবুত করা। নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক বাড়ানো। যদি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জোরদার করে নিজেদের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য তৈরি করে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে পারি। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র মেরামতে তারেক রহমান যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন? বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা রুদ্ধ করার শক্তি তাদের নেই।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল বারী রবু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম আজাদ, মারুফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক আব্দার হোসেন খান, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ। সমাবেশ শেষে অধ্যাপক নার্গিস বেগম এবং অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে টাউন হল ময়দান থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি দড়াটানা মোড়, চৌরাস্তা মোড়, আর এন রোড় হয়ে মনিহারে গিয়ে শেষ হয়।
প্রতিনিধি/এসএস

