রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলছে সুন্দরবনের দুয়ার, ব্যস্ত বনজীবীরা

কামাল হোসেন, খুলনা
প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলছে সুন্দরবনের দুয়ার, ব্যস্ত বনজীবীরা

দীর্ঘ তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলছে সুন্দরবন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটক, বাওয়ালি, জেলে এবং মৌয়ালরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলে এবং বাওয়ালিরা তাদের স্টেশন থেকে পাস-পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। পর্যটকদেরও সুন্দরবন ভ্রমণে থাকছে না নিষেধাজ্ঞা। এ দিকে বনে ঢোকার শেষ মুহুত্বেও প্রস্তুতি চলছে বনজীবীদের।


বিজ্ঞাপন


010a9945-7688-426b-b337-3b8603b23515

সুন্দরবনের জলভাগে নানা প্রজাতির মাছ, চিংড়ি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায়। জুন থেকে আগস্ট মাস প্রজনন মৌসুম হওয়ায় মাছের ডিম ছাড়ার সময় থাকে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার; যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণে গত ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য জেলে ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। সোমবার থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে।

ফাইল_ছবি

সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাসানুর বলেন, আজ থেকে জেলে, বাওয়ালি এবং পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন


দাকোপের জেলে মিরাজ হোসেন জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তারা আবার মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। গেল তিন মাসে কষ্টের মধ্যে দিয়েই গেছে তাদের। আয়ের উৎস সুন্দরবন কেন্দ্রীক হওয়ায় নিষিদ্ধ সময়ে তাদেও তেমন কাজ করার সুযোগ থাকে না।

সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা দক্ষিণ বেদকাশি এলাকার বনজীবী আসাদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য নৌকা প্রস্তুত করছি। সুন্দরবনে যারা যায় তারা সবাই দরিদ্র। তিন মাস নিষেধাজ্ঞার সময় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা বেকার থাকেন। তাদের জন্য কোনো সুবিধা দেওয়া হয় না। ফলে কষ্টেই কাটাতে হয় নিষেধাজ্ঞার সময়টি। সুদে টাকা নিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ করতে হয় তাদের।

thumbnail_505358925_10228388988729188_8767155562703732145_n

জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা বনে যাইনি। তবে অসাধু জেলেরা বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে বিষ ছিটিয়ে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করছেন। এতে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

ট্রাফেলার্স লিংক বিডির স্বত্বাধিকারি আবু তাহের বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও সুন্দরবনে পর্যটনের অফ সিজন হওয়ায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের তেমন লাভ হবে না। তবে সিজন শুরু হলে পর্যটকরা পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন দেখতে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

 

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা রেঞ্জের ৫ স্টেশনের ৩ হাজার ১শ ৪৮ বিএলসির মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাছ আহরণের জন্য ১৬৫৩ বিএলসিতে ১৪ হাজার ২৩৭ পাস নিয়ে মাছ ধরতে যায় ৩৪ হাজার ১৭৭ জন জেলে। একই সঙ্গে ১২৪৬ বিএলসিতে ৯ হাজার ৮০৪ পাস নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যায় ২০ হাজার ৫৬৭ জেলে। এ ছাড়া ভ্রমণের জন্য কোনো ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিবন্ধন হয়নি।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরবনকে তিন মাসের জন্য সকল ধরনের পরিবেশ নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। যে কারণেই পর্যটক থেকে শুরু করে কোনো জেলেই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারে না। যারা প্রকৃত জেলে তাদের জন্য সরকারিভাবে দুই কিস্তিতে ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর