রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

খাগড়াছড়িতে খেজুর চাষে সফল কৃষি উদ্যোক্তা নুর আলম

জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

খাগড়াছড়িতে খেজুর চাষে সফল কৃষি উদ্যোক্তা নুর আলম

খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা উপজেলার বাজারের দক্ষিণে সাড়ে চার কিলোমিটার দূর গেলেই রসুলপুর গ্রাম। গ্রামে দুই একর টিলাতে সারি সারি খেজুর গাছ। গাছে বারহি জাতের পাকা হলুদ রঙের খেজুর থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে। এ ধরনের খেজুরের চাষ পাহাড়ে প্রথম হচ্ছে। প্রথমবারের মতো চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। 

গত বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, আড়াই বছর বয়সে গাছে ফলন আসতে শুরু করেছে। পোকামাকড় ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে সাদা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী বা ফল প্রেমীরা কিনতে আসলে চাষি পাকা ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। ফলের সুরক্ষায় সাদা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


nur_alam_2

চাষি জানান, কৃষির বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে দেখে আমার আগ্রহ জন্ম হয় । একশ ছয়টি গাছের মধ্যে দুই বছরের মাথায় ৭২টি ছোট-বড় গাছে ফলন এসেছে। ছোট গাছের বয়স আড়াই বছর, বড় গাছের সাড়ে পাঁচ বছর। গাছের উচ্চতা চার থেকে পাঁচ ফুট। একটি ছোট গাছে সাত থেকে দশ কেজি এবং বড় গাছে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ কেজি ফল পাচ্ছি। প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছি। এই বছর বারশ কেজি ফলন পাব বলে আশা করছি। 

nur_alam_3

চাষি আরও জানান, একশ ছয়টি গাছ আছে। এই বছর বাহাত্তরটি গাছে ফলন এসেছে। পঁচিশটি গাছে ফলন এসেছে কারণ প্রথমে রোপণ করা ছিল যা ইংল্যান্ড থেকে আনা। পরবর্তী পঁচাত্তরটি গাছ ধাপে ধাপে সৌদি আলরাজি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । ২০২২ থেকে ফলন পাচ্ছি । গত বছর তুলনায় এই বছর উৎপাদন আরও বেশি হয়েছে। গত বছর পঁচিশটি গাছে ৪০০ কেজি ফলন পেয়েছি। এই বছর পঁচিশটি গাছে ৬০০ কেজি ফলন সংগ্রহ করেছি এবং ধারণা করছি গাছে এখনও ১০০ কেজি ফলন আছে। ফলন বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। 


বিজ্ঞাপন


nur_alam_4

চাষি মো. নুর আলম জানান, দেশে অনেকে খেজুর বাগান করতে উদ্যোগী হয়েছেন। খেজুর হাই ভ্যালু ফল। কিন্তু এখানে প্রথম ইনভেস্ট অনেকে বেশি। সরকার এই বিষয়ে নজর দিতে হবে, কীভাবে দেশের উদ্যোক্তারা খেজুর বাগান করতে পারে। সরকারের কাছ থেকে টিস্যু কালচারের চারা নিতে পারে এই ব্যবস্থা করা যুক্তিযুক্ত। আমরা সবাই জানি প্রতি বছর সরকার পঁচিশ হাজার টন খেজুর আমদানি করে। এর একটি অংশ কাঁচা খেজুর আমদানি করে বাহিরের দেশ থেকে। দেশে যারা বাগান করছে প্রায় বিচি থেকে বাগান করা। যে পরিমাণ কাঁচা উৎপাদন হচ্ছে তার স্বল্প পরিমাণে জোগান দিতে পারছি না। সরকারিভাবে যদি একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় তাহলে আমাদের ফরেন ক্যাচিচ সেভ হবে। কাঁচা খেজুরটা উৎপাদন করতে আবহাওয়া ভালো হয় তাহলে আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। 

nur_alam_5

মো. নুর আলম আরো জানান, দেশের আবহাওয়াতে যেহেতু খেজুর শুকাতে পারব না। সেই জন্য নতুন উদ্যোক্তারা খেজুর বাগান করতে উদ্যোগী হয় তাহলে পরামর্শ থাকবে শুধু বারহি জাতের খেজুর বাগান করে। অন্য জাত দিয়ে যাতে না করে। বারহি ভ্যারাইটি কাঁচা খাওয়ার জন্য ওয়ার্ল্ড ফেমাস। আমাদের দেশের আবহাওয়াতে অন্য ভ্যারাইটি রোপণ করি তাহলে সেই খেজুরটা শুকাতে পারব না। গাছে পচে যাবে। আমাদের দেশে এখনও কোনো ফমুর্লা বের হয় নাই, গাছ থেকে কাঁচা অবস্থায় পেড়ে শুকাবো অথবা এটাকে ড্রাই করব তারপর সেল করব। তাই বাগান করলে টিসু ক্যালচারে চারা দিয়ে বাগান করে, সেটা যেন বারহি ভ্যারাইটি হয়।                        

চাষাবাদ নিয়ে চাষি মো. নুর আলম বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে ফুল আসে এবং আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফল সংগ্রহ করা শুরু করি। পৃথিবী ব্যাপি কাঁচা খাওয়ার জন্য বারহি জাতের খেজুর বিশ্বে বিখ্যাত। সবচেয়ে বেশি ফল দেয় বারহি। বাগান বড় করতে গর্ত তৈরি করা হয়েছে।

nur_alam_6

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী জানান, খাগড়াছড়ির আবহাওয়া ও জলবায়ু বারহি জাতের খেজুর চাষের উপযোগী। বাগানে গিয়ে দেখেছি এই বছর প্রচুর ফলন এসেছে। দুই-তিন বছর গেলে ফলন আরও বাড়বে। এক-একটি গাছে ৪০ থেকে ৫০ কেজি ফল এসেছে। দাম পাচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে চাষীও বেশ খুশি। এই বারহি জাতের খেজুর কাঁচা খাওয়ার জন্য ভালো। প্রসেসিং করার মত যন্ত্রও নেই, আবার প্রসেসিংও ভালো হবে না। কাঁচা খাওয়ার জন্য উপযোগি এবং মিষ্টতাও বেশি। তিনি বলেন, মাটিরাঙ্গার ঝরনা টিলায় এলাকায়ও ছোট আকারে চাষ করছে। এখানেও ফলন এসেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, চাষি ব্যক্তি উদ্যোগে খেজুর বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি একশ ছয়টি বারহি জাতের খেজুর গাছ রোপণ করেছেন। বারহি জাতের খেজুর বাংলাদেশের আবহাওয়া সুইটেবল। তিনি খেজুরের চারা ইংল্যান্ড এবং সৌদি আরবের আলরাজি থেকে সংগ্রহ করেছেন। উনার বাগানে ইতিমধ্যে বাহাত্তরটি গাছে ফলন এসেছে। উনি বলেছেন কাঁচা অবস্থায় খেজুর সাধারণত সবাই খেয়ে থাকেন এবং খেজুরের জন্য বারহি জাতটা খুবই উপযুক্ত।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর