রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

এসডিএফের ঋণ কেলেঙ্কারি, ফুঁসে উঠেছে শতাধিক ভুক্তভোগী

জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর
প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

এসডিএফের ঋণ কেলেঙ্কারি, ফুঁসে উঠেছে শতাধিক ভুক্তভোগী

সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)-এর ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলায়। দরিদ্র মানুষের নামে ভুয়া ঋণ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে জেলার ঝিনাইগাতীর নলকুড়া ইউনিয়নের মানিককুড়া গ্রামের শতাধিক ভুক্তভোগী।

জানা যায়, ১৭০ জন সদস্যের মধ্যে ১৩১ জনের নামে দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৮শ ৮০ টাকার ঋণ। কিন্তু বাস্তবে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি কোনো টাকা পাননি। অথচ তাদের নামে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন ভিক্ষুক, দিনমজুর, হতদরিদ্র ও মৃত মানুষও।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগীরা জানান, এমন ভয়াবহ জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এসডিএফ’র উপজেলা ক্লাস্টার অফিসার হারাধন মহন, সমিতির সভাপতি মমিনা বেগম, সম্পাদক আঞ্জুয়ারা ও কোষাধ্যক্ষ মিনারা বেগম।

রুবিয়া বেগম, খোদেজা বেগম, সুফিয়া বেগম, রাশেদা বেগম, অজুফা বেগম, ছাবিনা ইয়াছমিন, আবেদা খাতুন, আবিরন বেগম, ছফুরা বেগম, সুখি আক্তারসহ শতাধিক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গ্রামের সহজ সরল খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের নামে সমিতির লোকজন নিজেরাই ঋণ নিয়েছে। আমাদের সই, স্বাক্ষর বা স্বাক্ষী কিছুই করা হয়নি। আমরা কোনো টাকাও তুলিনি। আমরা এই চোর বাটপারদের বিচার চাই। 

thumbnail_20250825_173538_(1)

স্থানীয় চাঁন মিয়ার স্ত্রী অযুফা বেগম মারা গেছেন বছর দেড়েক আগে। চাঁন মিয়া জানান, আমার মৃত স্ত্রীর নামেও এই সমিতির লোকজন ঋণ তুলেছে। আমার স্ত্রী কি কবর হতে উঠে এসে সিল স্বাক্ষর দিয়ে টাকা নিয়ে গেছে। এই প্রতারকদের শাস্তি চাই। 


বিজ্ঞাপন


বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা ফুলবানু বলেন, আমি পাহাড়ে ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়েই চলে সংসার। নিজের ভিটেমাটি নেই, থাকি অন্যের পরিত্যক্ত ঘরে। আমার স্বামী অসুস্থ মানুষ। আমার নামে এক লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে, এ কথা শুনেই চিন্তায় আমরা শেষ। আমার অসুস্থ স্বামী চিন্তায় স্ট্রোক করেছে। এখন আমার স্বামী মারা গেলে, এর দায়ী সমিতির স্যারদের নিতে হবে।

আরেক ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ, সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলে না। অথচ আমাদের নামে নাকি অনেক টাকা ঋণ উঠেছে। অথচ আমি এক টাকাও পাইনি। এখন যদি এই টাকার দায় আমার ঘাড়ে চাপানো হয়, তবে আমি কোথায় যাবো। এই কাজ যারা করেছে তাদের বিচার চাই।

বৃদ্ধা আবিরন বেগম বলেন, আমাদের নাম ব্যবহার করে টাকা তুলে খেয়ে ফেলেছে ওরা। আমরা তো কিছুই জানতাম না। এখন যদি সমিতি কিস্তি চাই, আমরা কী দিয়ে শোধ করব। আমরা এর দায় থেকে মুক্তি চাই। আমাদের মতো গরিব মানুষদের উপর এতো বড় জুলুম যারা করেছে তাদের শাস্তি চাই।

ঘটনা জানাজানি হলে সমিতির মানিককুড়া অফিসে তালা দিয়ে সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পালিয়ে সটকে পড়েন। একারণে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মমিন বলেন, বিষয়টি সত্য। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। আমার পরিবারের নামেও ঋণ তুলেছে সমিতির লোকজন। আমার গ্রামের শতাধিক লোকের ঘুম হারাম করে ফেলেছে এসডিএফ সমিতি। আমি এদের বিরুদ্ধে সবাইকে নিয়ে আইনের আশ্রয় নিবো।

জানতে চাইলে উপজেলা ক্লাস্টার অফিসার হারাধন মহন বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এটি সমিতির স্থানীয় কেন্দ্রের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয়রাই বিতরণ করে। তবে মানিককুড়ার বিষয়টি কিভাবে হয়েছে তা আমি জানি না।

জানতে চাইলে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, গ্রামের দরিদ্র মানুষের নামে ঋণ দেখিয়ে কেউ যদি টাকা আত্মসাৎ করে থাকে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযোগ সাপেক্ষে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর