জেলার প্রায় বারো লক্ষাধিক জনসংখ্যার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সরকারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতাল। ১০০ শয্যা হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন আন্তঃবিভাগে প্রায় চারশতাধিক রোগী ভর্তি থাকে এখানে। এছাড়া, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন প্রায় পনেরো শতাধিক রোগী সেবা গ্রহণ করে থাকে।
জেলার ৫টি উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলা হতে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে আসেন রোগীরা। কিন্তু রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে সব ওষুধপত্র পাচ্ছে না তারা।
বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর থেকে আসা শারমিন আক্তার জানান, কয়েকদিন ধরে জ্বর, কাশি থাকায় তিনি চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালের বহির্বিভাগে। ডাক্তার ৫ প্রকারের ওষুধ দিলেও হাসপাতাল থেকে শুধু প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো বাইরে থেকে নিতে বলেছে।

এদিকে হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে তীব্র পেট ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন জেলার আলমডাঙ্গার হারদি ইউনিয়নের মোজাম্মেল হোসেন। দিনের শুরুতে ডাক্তার একবার এসে দেখে গেলেও দুপুরে পরে আর কোনো ডাক্তারকে তেমন পাওয়া যায় না। তাছাড়া, ইনজেকশন ও ওষুধের বেশিরভাগই বাইরে থেকে কিনতে হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রি-এজেন্টের অভাবে ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা। যার সুযোগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদেরকে দালাল চক্র বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যায়।
এদিকে ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে সরকার দেশের জেলা সদর হাসপাতাল পর্যায়ে ১০ শয্যার আইসিইউ স্থাপন উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালে ও স্থাপন করা হয় ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে, উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমই চালু হয়নি এই আইসিইউ ইউনিটের। অভিযোগ আছে, আইসিইউ ইউনিট স্থাপনে নিম্নমানের চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি সরবরাহসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, গত বছর আমি এই হাসপাতালে যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে আমি সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, ৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল কাঠামো দিয়ে এখনও চলছে হাসপাতাল কার্যক্রম। প্রয়োজনের তুলনায় বর্তমানে ডাক্তার-নার্সসহ অন্যান্য জনবলের অনেক ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে আইসিইউ সেবাও চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, আমরা চেষ্টা করছি এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য।
রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। তারই লক্ষ্যে আমরা হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সেবা সামগ্রী দ্রুত ক্রয়ের লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করেছি। আশা করি নতুন অর্থ বছরের প্রয়োজনীয় মালামাল এসে গেলে এই সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
প্রতিনিধি/এসএস

