দুই যুবককে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি ও যশোরের তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে যশোর সদর উপজেলার তরফ নওয়াপাড়া গ্রামের কাজী তৌহিদুর রহমান খোকন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি ‘গুম হওয়া’ যুবক সাইদুর রহমানের বাবা।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ আমলে নিয়ে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহমত আলী কোতোয়ালি থানার ওসিকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মিলন আহমেদ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন টিএসআই রফিকুল ইসলাম, যশোরের শংকরপুরের আনারকলির ছেলে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমারখালী গ্রামের শ্যাম হাওলাদারের ছেলে ফুলু মিয়া, মৃত হাকিম শেখের দুই ছেলে রমিজ শেখ ও নাসির শেখ, মৃত হাই শেখের ছেলে সাইফুল শেখ, জব্বার শেখের ছেলে হারুন অর রশিদ শেখ, মৃত সেলিম শেখের ছেলে জাহিদুল শেখ এবং জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আল আমিন তালুকদার।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তিনি যশোরে থাকেন, তবে তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কুমারখালীতে। সেখানে তাদের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা ও কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা ছাড়া অন্য আসামিরাও সবাই পিরোজপুরের। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল।
বাদী জানান, তিনি জানতে পারেন গ্রামে থাকা তার সম্পত্তি ওই আসামিরা জোর করে দখল করে নিয়েছে। পরে বিষয়টি যাচাইয়ে তিনি ছেলে সাইদুর রহমান (সাইদ) কে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল গ্রামের বাড়িতে পাঠান। তখন আসামিরা তাঁকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে ৫ এপ্রিল দুপুরে সাইদ ও তার বন্ধু শাওন শহরের পৌর পার্কে ঘুরতে গেলে আসামি গোলাম মোস্তফাসহ অন্যদের উপস্থিতিতে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নির্দেশে টিএসআই রফিক তাদের মারধর করে আটক করে।
খবর পেয়ে তৌহিদুর রহমান কোতোয়ালি থানায় যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে কোনো সহায়তা করেনি। পরে পুলিশ সুপারের কাছে গেলে তিনি দুই যুবককে আদালতে সোপর্দ করার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে, টিএসআই রফিক ও গোলাম মোস্তফা তাদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। এর পরেও তাদের আদালতে সোপর্দ কিংবা ছেড়ে না দেওয়ায় এক পর্যায়ে তার স্ত্রী, সাইদের মা হীরা বেগম আদালতে মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
খবর পেয়ে টিএসআই রফিক হীরা বেগমকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বাড়িতে আটকে রেখে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। রাজি না হলে তাঁকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিদ্যুতের শক ও হত্যার হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করানো হয়। এতে হীরা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে মারা যান। এরপর সাইদ ও তার বন্ধু শাওনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাদীর দাবি, তাদের দুজনকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। সে সময় আসামিরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি বলে জানিয়েছেন তৌহিদুর রহমান। বর্তমানে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হওয়ায় আদালতে মামলা করেছেন।
প্রতিনিধি/একেবি

