বরগুনা জেলার বেশিরভাগ সড়কের অবস্থা বেহাল। যেখানে সেখানে বড় বড় গর্ত, উঠে গেছে পিচ-পাথর। এতে সড়কে যান চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে, যা দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি করছে। শুকনো মৌসুমে ধুলা, বর্ষায় কাদা—দু’ভাবেই যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি। এই অবস্থা শুধু অসুবিধা নয়, বরং সড়কে চলাচল একপ্রকার আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সময় এসেছে কর্তৃপক্ষ মানবিকভাবে পরিস্থিতি বুঝে সড়ক সংস্কারের দিকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার।
সরেজমিনে ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, আমতলী- তালতলী-সোনাকাটা সড়ক জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। যেখানে পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি উপজেলা। তালতলী থেকে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ এটি। তিন বছর আগে কিছু অংশ সংস্কার হলেও বর্তমানে অন্তত ২৪ কিলোমিটার অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে।
বিজ্ঞাপন

একই অবস্থা সদর উপজেলার নলী বাজার থেকে বরগুনা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কেও। এছাড়া ছোটবগী-তালতলী, বরগুনা-চালিতাতলী, বরগুনা-কালিরতবক, পরীর খাল-রাখাইনপাড়া, বামনা- খোল পটুয়া, ডৌয়াতলা-আয়লা বাজার, বৈকালীন বাজার-আয়লা, পচাকোড়ালীয়া- চান্দখালীসহ একাধিক সড়ক খানাখন্দে ভরপুর। যানবাহন চলাচলের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এসব রাস্তায়। ভোগান্তির কবলে পড়ছে জেলার ছয়টি উপজেলায় বসবাসরত লাখ লাখ মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তথ্য সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলায় এলজিইডির আওতায় ৭ হাজার ৫৬১ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়কের মধ্যে ১ হাজার ৪৪১ কিলোমিটার কার্পেটিং। বাকি ৬ হাজার ১২০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। এসব সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করে। প্রতি অর্থবছরে পাকা সড়কে অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ মেরামতের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪৮০ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন
সেই অনুযায়ী বরগুনা জেলার প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার পাকা সড়ক সংস্কারে ৩১২ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের অসমাপ্ত কাজ বাবদ বাদ যাবে ২০ কোটি টাকা। ফলে কার্যত নতুন মেরামতের জন্য থাকছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা, তা দিয়ে প্রায় ২১ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার সম্ভব হবে। যা প্রয়োজনের তুলনায় ৪.৩৭ ভাগ। অথচ বাস্তবে জেলার অনেক বেশি সড়কই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে কথা বললে মো. নাইম, সত্তার, আব্দুস খালেক, জতিন্দ্রসহ একাধিক অটোরিকশা, ভ্যান, সিএনজি, বাস, ট্রাক চালকরা জানান, বছরের পর বছর আমরা ভাঙা রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছি। প্রায়ই গর্তে পড়ে গাড়ি নষ্ট হয়, যাত্রীরাও বিরক্ত হয়ে ঝগড়া করেন। সরকার পাল্টায়, কিন্তু রাস্তার চেহারা পাল্টায় না। কখনও বেহাল দশা উপেক্ষা করে রাস্তার সৌন্দর্য ফিরে আসবে বলে মনে হয় না!

কালিরতবক এলাকার জাফর হোসেন হাওলাদার বলেন, কালিরতবক থেকে বরগুনা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। গত বছর তিন কিলোমিটার সংস্কার হলেও বাকি সাড়ে চার কিলোমিটার এখনও বেহাল। এ পথে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। এখন হাঁটতেই কষ্ট হয়, গাড়ি তো চলছেই না।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান বলেন, বরাদ্দ সীমিত হওয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো আগে সংস্কার করা হচ্ছে। বাকি রাস্তা সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন। অতিরিক্ত অর্থের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

