গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে ডান চোখ হারিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র শুভ মাহমুদ। শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি এখনও ভুগছেন মানসিক ট্রমায়।
লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা শুভ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। ১৬ জুলাই মুরাদপুরে আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তার কর্নিয়া ও রেটিনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই দফা অস্ত্রোপচারেও চোখটি রক্ষা করা যায়নি। ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও পরবর্তীতে ঢাকার সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচ-এ চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
শুভ জানান, আহত হওয়ার পরপরই কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। ব্যারিকেড ও আতঙ্কের কারণে রিকশায় চমেকে পৌঁছান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকার চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। অনেক প্রতিকূলতার পর সেখানে ভর্তি হলেও দীর্ঘ সময় চিকিৎসা না পেয়ে বেডে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ তার।
শুভ বলেন, আমি সরকার বিরোধী আন্দোলনে চোখ হারাই। তাই, আমাকে তারা ভর্তি করতে চাচ্ছিলেন না। অনেক জোরাজোরির পর ভর্তি করালেও তারা আমাকে চিকিৎসা না দিয়েই বেডে ফেলে রাখেন। এরপর ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় আমার অপারেশন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তখন পর্যন্ত আমিই ছিলাম জুলাই আন্দোলনে প্রথম চোখ হারানো ব্যক্তি। সেদিন যে ডাক্তার আমার চক্ষু অপারেশন করেছিলেন, তিনি আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন, "আহা, এত কম বয়সী ছেলে, আর কোনোদিন দেখতে পাবে না।
এর ১৫ দিন পর চক্ষু ইনস্টিটিউট থেকে ছুটির পর চেক-আপের জন্য শুভ যান আরেকটি চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে দেড় মাস চিকিৎসার পর পরামর্শ দেওয়া হয়— চোখটি কেটে ফেলতে, নাহলে সেটি পঁচে যেতে পারে। কিন্তু শুভ সেই সিদ্ধান্তে রাজি হননি। বরং বিকল্প খুঁজতে থাকেন। যাতে শুভর চোখটা অন্তত কাটতে না হয়।
বিজ্ঞাপন
শুধু শারীরিক নয়, চোখ হারানোর পর তিনি পড়েছেন পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে। আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে কাউন্সেলিং নিচ্ছেন।
এক চোখ হারানোর পর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকার কথা জানালেন শুভ, চোখ হারিয়ে শুধু আলো না, হারিয়েছি অনেক কিছু। যেদিকে তাকাই, বাধা দেখি। কিন্তু এখন একটু একটু করে মানিয়ে নিচ্ছি,”—শুভ জানালেন। তার একমাত্র চাওয়া— বাম চোখের দৃষ্টি যেন অক্ষুণ্ন থাকে।
চোখের ভিতরে নয়টি সেলাই এখনো শুকায়নি। এর মাঝে আরও একটি অপারেশন করার পরিকল্পনা আছে। তবে সুস্থ চোখটির দৃষ্টিশক্তিও একসময় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। এখন অনেকটা ঝাপসা হলেও দেখতে পান। "আমার এখন শুধু একটাই চাওয়া— বাম চোখটা যেন ভালো থাকে,"—আশায় বুক বাঁধেন শুভ।
দৃঢ় সংকল্পের সাথে শুভ বলেন, সরকার যদি শহীদদের সাথে বেঈমানি করে, বেওয়ারিস শহীদদের পরিচয় শনাক্ত না করে, আহতদের পুনর্বাসন না করে, আর আন্দোলনকে কলুষিত করে, তাহলে আমি আমার দ্বিতীয় চোখটাও দিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আদর্শ বিক্রি করবো না।
প্রতিনিধি/ এজে

