পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাসের কারণে অন্য রকমের এক বৈচিত্র্যময় আবহ তৈরি হয়েছে। মনিপুরি, গারো, ত্রিপুরা, মুন্ডা, খাসিয়া, সাঁওতালসহ নানান জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এই এলাকায়।
বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মতো এখানকার মনিপুরিদেরও রয়েছে নিজস্ব ভাষা, বিশাল ইতিহাস; রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। মণিপুরীদের তাঁতশিল্পও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, যুদ্ধ-বিগ্রহের নানান উপকরণের সমন্বয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে মণিপুরি জাদুঘরও। কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ছনগাও গ্রামের হামোম তনু বাবু নিজ বাড়িতে এই জাদুঘর গড়ে তুলেছেন। তিনি ২০০৬ সালে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চাউবা মেমোরিয়াল মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি মিউজিয়াম’ নামের এই জাদুঘরটি।
বিজ্ঞাপন
মণিপুরিদের প্রাচীন বিলুপ্তপ্রায় সামগ্রীসহ প্রায় তিন শতাধিক উপকরণ স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরটিতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন, নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন দেখতে। জাদুঘরে স্থান পাওয়া তিন শতাধিক উপকরণের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যর সঙ্গে পরিচিত হতে এই সংগ্রহশালা অনন্য বলে মনে করছেন নৃতত্ত্ব গবেষক ও দর্শনার্থীরা। এটি একক নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেশের একমাত্র জাদুঘর দাবি করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন জাদুঘরটির প্রতিষ্ঠাতা মণিপুরি লেখক ও গবেষক হামোম তনু বাবু।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটি-দু’টি করে উপকরণ সংগ্রহ, পরে নিজের বাড়িতে একটি কক্ষে শুরু করি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজ। এখন আমার বাড়ির ৪টি কক্ষজুড়ে সাজানো আছে বিভিন্ন উপকরণ।’
তিনি জানান, ২০০ বছর আগের ব্যবহৃত কয়েন, মণিপুরি মহাকাব্যের নায়ক-নায়িকার ছবি এবং যুদ্ধবিগ্রহে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ রয়েছে এখানে। প্রাচীন ঐতিহ্য ও নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে মণিপুরিদের আদি ধর্ম দেবতাদের পরিচিতি। আছে মণিপুরি নারীদের ব্যবহারের বিভিন্ন ধরনের গয়না, সাজসজ্জার উপকরণ। প্রাচীন কাঁসা পিতলের কলস, জগ, মগ। বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী। আছে কাপড় বুননের প্রাচীন সরঞ্জামও। কৃষিকাজে ব্যবহৃত উপকরণ ও প্রাচীন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রও স্থান পেয়েছে এখানে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জাদুঘরটি পরিদর্শন করে বলেন, “বাস্তবিক অর্থে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মণিপুরিদের এমন একটি সংগ্রহশালা আমাদের একদিকে যেমন অনুপ্রাণিত করে, অন্যদিকে দায়বদ্ধও করে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, এখানে সকল জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও অধিকার সংরক্ষণে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।”
বিজ্ঞাপন
এএ

