আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে সারাদেশে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। দরিদ্রদের জন্যে দেওয়া এই ঘর পেয়ে সেখানে এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) ও আকাশ ডিটিএস লাগিয়ে এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের মো. ইকবাল সেপাই।
এলাকাবাসীর মনে প্রশ্ন, দরিদ্র হিসেবে গৃহহীনের কোটায় ঘর পাওয়া ব্যক্তি কিভাবে তার ঘরে এসি এবং আকাশ ডিটিএস ব্যবহার করে?
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইন্দুরকানী উপজেলায় হাতে গোনা কিছু সরকারি অফিস, মসজিদ এবং বাসাবাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ব্যবহার হয়।
এ ছাড়া এলাকার অন্যান্য বাসা-বাড়িতে বা বহুতল ভবনে সচরাচর এসির ব্যবহার চোখে পড়ে না। অথচ সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণের ঘরে ব্যবহার হচ্ছে এসি! যিনি ওই ঘরের মালিক তিনি জাতীয় পার্টির (জেপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার ৩ নম্বর বালিপাড়া ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক মো. ইকবাল সেপাই।
একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা হওয়ার সুবাধে দলীয় সুপারিশে তিনি এ ঘরটি পেয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি ড্রেজিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাসে ৫০ থেকে এক লাখ টাকার মতো তার আয়। চলেন প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যের পালসার মোটরসাইকেলে। চলাফেরা কিংবা বেশভূষা দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে তিনি দরিদ্র মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য এ উপজেলায় ৫৪৪টি গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে কিছু ঘর নির্মাণাধীন থাকলেও বাকি ঘরগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এগুলো তালিকাভুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর মাঝে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ উপজেলায় জাতীয় পার্টির (জেপি) দলীয় সুপারিশে বেশ কিছু ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। যার অধিকাংশই জেপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে নিজ নামে আশ্রয়ণের ঘর পাওয়া মো. ইকবাল সেপাইর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, সরকারিভাবে আমি এই ঘরটি পেয়েছি। আমি গরম সহ্য করতে পারি না। তাই ঘরে এসি লাগিয়েছি। এতে দোষের কী হলো!
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, গৃহহীনদের তালিকায় বালিপাড়া গ্রামে ইকবাল সেপাইর নামে একটি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি নিজ উদ্যোগে ঘরে এসি লাগিয়েছেন বলে লোকমুখে শুনেছি।
ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেসা খানম বলেন, দরিদ্র ও অসহায় বা এমন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে সরকারি খরচে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। কোনো সচ্ছল ব্যক্তির এ ঘর পাওয়ার কথা নয়। তার পরও এ ধরনের অভিযোগের সূত্র ধরে বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।
/এএস