রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জুলাইয়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা প্রতিশ্রুতি দাতারাই: নূর

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, জাবি
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

জুলাইয়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা প্রতিশ্রুতি দাতারাই: নূর

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর বলেছেন, জুলাইয়ের একটি অলিখিত প্রতিশ্রুতি ছিল নতুন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার। গত এগারো মাসে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিশ্রুতি দাতারাই। এই প্রতিশ্রুতি মানুষকে হতাশ করেছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা যে পূরণ হয়নি সেটি শহীদ পরিবারদের কথা শুনলে বোঝা যায়।

আওয়ামী লীগের আমলে একদল লোক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে মানুষকে জুলুম, নির্যাতন, প্রশাসনকে ব্যবহারসহ সবকিছুই করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরেও আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের কথা বলে যারা প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে তারাও একই কাজ করেছে।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি শাখার উদ্যোগে ‘জুলাইয়ের প্রতিশ্রুতি: প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ লেখনী প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

নূরুল হক নূর বলেন, বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতি আমাদের সমাজ ও পরিবারকে এমনভাবে বিভক্ত করেছে যে, ভাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে। এই রাজনীতি  সামাজিক বন্ধন তো দূরের কথা পারিবারিক বন্ধনই শেষ করে দিয়েছে। এই অপরাজনীতির পরিবর্তন হওয়া দরকার।

1000229802

বাংলাদেশে নতুন সংবিধান প্রণনয় দরকার বলে উল্লেখ করে নূরুল হক বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের যে ১৭ বার সংশোধনী করা হয়েছে, তা ছিল কার্যত শাসকদের ক্ষমতায়ন করার জন্য। ড. কামাল উদ্দিন বলেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান তখন আমাদের নেতা। তিনি যেন অমর হয়ে কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন সেটি মাথায় রেখেই আমরা সংবিধানটা করেছিলাম। সংবিধান একটি ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে রচিত হতে পারে না। এই সংবিধান কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে নতুন সংবিধান দরকার।


বিজ্ঞাপন


আমরা ২০২১ সালে ২১ দফা ঘোষণা করেছিলাম। তার মধ্যে একটি ছিল, একই ব্যক্তি সরকারের প্রধান ও দলীয় প্রধান হবেন না এবং ১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। এখন সেটি আলোচনা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

ভালোকে ভালো মন্দকে মন্দ বলার স্বাধীনতা নিয়ে পথ চলতে চাই: ড. ফয়জুল হক

দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে মুসলিম, হিন্দু কমিউনিটি রয়েছে। তারা বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে সেটাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের দেশে হেফাজত ইসলামের মতো সংগঠন থাকলে অনেকেই মনে করে এটা দোষের। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও ধর্মীয় সম্প্রীতি অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে। যতটুকু ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা হয়েছে সেটি রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দলের স্বার্থে বা তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। কিন্তু সবসময় বাংলাদেশকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়, এদেশের সংখ্যালঘুরা অনিরাপদ। তাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করা হয়। সব সরকারের আমলেই কিছু দেশি-বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এগুলো দেখানোর চেষ্টা করে। কারণ বাংলাদেশ সংকট জিইয়ে রেখে তারা ফায়দা নিতে চায়। এজন্যই আমরা বলেছিলাম, রাজনীতির একটি নতুন উন্মেষ দরকার। নতুন রাজনীতির মধ্যে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জুলাইয়ে একটি অলিখিত প্রতিশ্রুতি মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছিল যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাব, যেখানে নাগরিকদের অধিকার ও মর্যাদা থাকবে। ৩ আগস্টের ঘোষণাই ছিল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। জুলাই আন্দোলনের একটা প্রতিশ্রুতি ছিল। গত এগারো মাসে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিশ্রুতি দাতারাই। এই প্রতিশ্রুতি মানুষকে হতাশ করেছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা যে পূরণ হয়নি সেটি শহীদ পরিবারদের কথা শুনলে বোঝা যায়।

thumbnail_1000229800

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে উদ্দেশ্য করে নূর বলেন, আমার সহকর্মী, বন্ধু সহযোদ্ধা যারা মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ৫ আগস্টের পরে তারাই সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগের আমলে একদল লোক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে মানুষকে জুলুম, নির্যাতন, প্রশাসনকে ব্যবহারসহ সবকিছুই করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পরেও আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের কথা বলে যারা প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে তারাও একই কাজ করেছে। আমি মনে করি, মোহ তাদেরকে গ্রাস করেছে, তাদের পরিপক্কতার অভাব রয়েছে।  গণঅভ্যুত্থানের পর  তাদের সুযোগ ছিল, সরকারের অংশীদার না হয়ে সরকারকে চাপে রাখার, রাজনৈতিক দল না হয়েও জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থেকে বছর খানেক কাজ করে রাজনীতির দিকে যাওয়ার। আমরা কাউকে নেতা বানানোর জন্য বা সরকার বানানোর জন্য জুলাই আন্দোলন করিনি। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য এবং জুলাইয়ের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্য আমাদের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই।

আরও পড়ুন

ছাত্রলীগে ‘লুকিয়ে থাকা’ শিবিরকে বাঁচানোর অভিযোগ, যা বললেন সাদিক কায়েম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো হওয়া জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে এই ইন্টেরিম সরকারের আমাকে ডাকসু, জাকসু, রাকসুসহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো হওয়া দরকার। রাজনৈতিক সরকার যে প্রতিশ্রুতিই দিক তা তারা পূরণ করতে পারবে না। কারণ ছাত্ররা ক্ষমতাসীনদের দিকে আঙুল তুলে ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে এজন্য তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে চায় না। পড়াশোনার পরিবেশ বদলের জন্য রাজনৈতিক বদল করতে হবে। সেজন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে। ছাত্র সংসদকে আপনারা শুধু রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ভাববেন না। ছাত্র সংসদ শিক্ষাঙ্গনে ভালো পরিবেশ তৈরি করার এবং ছাত্র-শিক্ষকের ভালো যোগসূত্র তৈরি করার ভালো মাধ্যম। ছাত্র সংসদ যেভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অ্যালামনাই ও প্রশাসনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারে, ছাত্র সংগঠনগুলো সেভাবে পারে না। আশা করি ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো আমরা শিগগিরই দেখতে পাব।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর